স্ট্রোক ইউনিটে যেসব সেবা পাবেন রোগীরা

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে যাত্রা শুরু করেছে বিশেষায়িত স্ট্রোক ইউনিট। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিটটির উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির এটির উদ্বোধন করেন।
এদিকে এই ইউনিটটি চালুর ফলে থ্রম্বোলাইসিসসহ স্ট্রোক রোগীদের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় দেওয়া যাবে। ফলে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহার এবং শারীরিক অক্ষমতা অনেকাংশে কমে আসবে। এছাড়া এই থেরাপির মাধ্যমে স্ট্রোক রোগীর হাতেপায়ে প্যারালাইসিস হওয়া রোধ করা যাবে। এই থেরাপি এমন একটি সেবা যার প্রাপ্তির সময়সীমা খুবই সীমিত। স্ট্রোক হওয়ার সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে এই সেবা দেয়া গেলে তা ফলপ্রসূ হবে। আর হার্টের চিকিৎসায় যেমন রোগীদের ইনজেকশন দেওয়া হয় তেমনি স্ট্রোক রোগীদেরও ইনজেকশন দেওয়া হয়। তবে তা অনেক ব্যয় বহুল। সরকারিভাবে এখানে সেটি মিলবে না। তাই এই ইউনিটে সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শে বাইরে থেকে ইনজেকশন নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, স্ট্রোক ইউনিটের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রোগীরা অত্যাধুনিক চিকিৎসা পাবেন। ঢাকার নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের পর বাংলাদেশে সরকারিভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ইউনিট সংযোজিত হতে যাচ্ছে। এখানে বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ওয়ান স্টপ জরুরি সেবা কেন্দ্রে একটি নতুন সিটিস্ক্যান মেশিন খুব শিগগির সংযোজন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নিউরোলজি ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক সময় লিফটের পাশে বারান্দায় রোগী ভর্তি দিতে হয়। এটি অমানবিক। আমরা চেষ্টা করছি, এই ওয়ার্ডের একটি বর্ধিত ওয়ার্ড খুঁজে বের করার।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, এই স্ট্রোক ইউনিট গঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো খুব দ্রæত সময়ে যেসব রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, তাদেরকে থ্রম্বোলাইটিক থেরাপির মাধ্যমে একটি বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রদান করা। এই থেরাপির মাধ্যমে স্ট্রোক রোগীর হাতে পায়ে প্যারালাইসিস হওয়া রোধ করা যাবে। এই থেরাপি এমন একটি সেবা যার প্রাপ্তির সময়সীমা খুবই সীমিত। স্ট্রোক হওয়ার সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা যদি এই সেবা শুরু করতে না পারি তাহলে তা ফলপ্রসূ হবে না।
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে ডা. ফারহানা মোছলেহউদ্দিন উল্লেখ করেন, এই ইউনিটের মাধ্যমে অত্যাধুনিক থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোকজনিত মৃত্যুহার এবং শারীরিক অক্ষমতা অনেকাংশে কমে আসবে।
নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এমএ হাছান চৌধুরী, রেডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার, নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এসএম নোমান খালেদ চৌধুরী, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শওকত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম খন্দকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারহানা মোছলেহউদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রয়াত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুর রহমানের বাবা মাহফুজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে হাসপাতালের উপ পরিচালক আফতাবুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন, ডা. রাজিব পালিত, নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কায়স্থগীর, ডা. শিউলি মজুমদার, ডা. পঞ্চানন দাশ, সহকারী অধ্যাপক ডা. মশিহুজ্জামান আলফা, ডা. মো. তৌহিদুর রহমান, ডা. মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া, ডা. জামান আহম্মদ, ডা. মো. একরামুল আযম শাহেদ, কনসালটেন্ট ডা. সীমান্ত ওয়াদ্দাদার, সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবির ও বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. পীযুষ মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. ওয়াহিদুর রহমানের নামে (ওয়াহিদুর রহমান মেমোরিয়াল স্ট্রোক ইউনিট) নতুন এই স্ট্রোক ইউনিটটির নামকরণ করা হয়।