সাধারণ মানুষের জন্য সুষমখাদ্য কাল্পনিক পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

18

মানবদেহের পুষ্টি রক্ষায় সুষম খাদ্য প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞান মানবদেহ রক্ষায় যে সুষম খাদ্যের তালিকার কথা বলে তা দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসব্জি, তরিতরকারীসহ খাদ্য দ্রব্যসামগ্রী মানবদেহকে পুষ্টির ঘাটতি হতে রক্ষা করে। প্রবাদ আছে ‘স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল’। একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জাতি দেশের উন্নতি অগ্রগতির পূর্বশর্ত। খাদ্য সেক্টরে দেশের উন্নতি কম হয়নি। তবু একথা সত্য যে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য দেশের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বিদেশ হতে আমাদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হচ্ছে। বিদেশ হতে খাদ্য আমদানি করতে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। যার কারণে আমদানি করা খাদ্যসামগ্রীর দাম একটু বাড়তি থাকে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে দেশে যে সকল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন হয় তাতেও আশানুরূপ মূল্যে ভোক্তারা খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে পারছে না।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, রোজার মাসে দুধ, ডিম, মাংসের দাম অধিক হবার কারণে সাধারণ মানুষ ও রোজাদাররা আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। শরীরের অপরিহার্য পুষ্টিকর খাদ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অবৈধ রোজগারের অধিকারী, সুদ, ঘুস, দুর্নীতির মাধ্যমে যারা অবৈধ রোজগারে ব্যস্ত তারা ছাড়া খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীরা সুষম খাদ্য দূরে থাক শরীরের সাধারণ পুষ্টির খাবার বাজার হতে ক্রয় করে খাওয়ার সামর্থ্য রাখছে না। কৃষক-শ্রমিক, স্বল্প আয়ের মানুষেরা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখে। অথচ তারা সুস্থ শরীরে কাজ করতে না পারলে দেশের আর্থ সামাজিক পরিবেশ সুস্থ থাকতে পারে না। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্টদের চিন্তায় আছে কি না সন্দেহ। দেশের বাজার ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় হতে খুবই অস্থিতিশীল। বাজারে কোন খাদ্যদ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকতে দেখা যাচ্ছে না। যা দেশের অধিকাংশ মানুষের যাপন যন্ত্রণার প্রধান কারণে পরিণত হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ কষ্ট করে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও তারা দু’বেলা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছে না। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এরজন্য এদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআই এর সাথে জড়িতরা দায় এড়াতে পারে না। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা বাজারে কার্যকর দেখা যায় না। সরকারি ভাবে সংশ্লিষ্টরা দায়সারা রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাত্র। যার কোন সুফল বাজারে দেখা যায় না। এর পেছনে দুর্নীতির বিশাল যজ্ঞ কাজ করছে। সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবিক মূল্যবোধ বিবর্তিত মানসিক রোগ সমগ্র দেশের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফলে কোন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, আমদানি এবং তদসংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনার অধিনে বাজারে সুলভ নয়। বাজারে সুলভ দ্রব্যও অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা চালবাজীর কারণে অস্বাভাবিক মূল্যে ক্রেতাদের ক্রয় করতে হয়। বৈধ রোজগারের স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা দেশে বেশি। তারা নির্দিষ্ট আয়ের টাকায় আকাশচুম্বী পুষ্টিকর খাদ্যের মূল্য প্রদান করে তা ক্রয় করতে পারছে না। ফলে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী পুষ্টিহীনতায় ভোগছে। পুষ্টিহীনতার কারণে দেশের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে নিপতিত। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ডিম, দুধ, মাংসের দাম তো সাধারণ মানুষের লাগামের বাইরে অবস্থান করছে রমজান মাস আসার পূর্ব সময় থেকেই। অথচ সরকার, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারী মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টানতে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশের বাজার ব্যবস্থায় সরকারি ভাবে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা না গেলে দেশের মানুষ এক পর্যায়ে চরম পুষ্টিহীনতায় ভোগবে। পুষ্টি জনিত রোগব্যাধী দেশে বেড়ে চলেছে। এমতাবস্থায় ওষুধে ভেজাল ও খাদ্যে ভেজালের দৌরাত্ম্যও লাগামহীন। কি ভাবে জনস্বাস্থ্য রক্ষিত হবে তা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। দেশের খাদ্যের বাজারে বর্তমান দুর্নীতি, ভেজাল, অকারণ দামবৃদ্ধির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এক সময় সমগ্র দেশ হাসপাতালে পরিণত হবে। তাই সংশ্লিষ্টদের দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনয়নে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য মূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পিত ভাবে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসলেই এঅবস্থা হতে দেশের সাধারণ, স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব।