সরকারি কর্মচারী হিসেবে দল নিরপেক্ষতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়

11

ঢাকা প্রতিনিধি

নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষে কাজ না করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত অবস্থানে থাকবে। ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে এ বার্তা দেন সিইসি।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে জেলা পরিষদ ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উদ্দেশে কোনো নেতাকর্মীকে যেন হযরানি করা না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকান্ড ইসি পর্যবেক্ষণে রাখবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
সিইসি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএম প্রশ্নেও বিতর্ক রয়েছে। আমরা কেবল বিশ্বাস করি না, প্রমাণ পেয়েছি ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্বাচনি সহিংসতা ও কারচুপি নিয়ন্ত্রণ সহজতর। ১৫০টি আসনে, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। তবে প্রয়োজনে ১৫০ এর অধিক আসনে ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও থাকবে। সে লক্ষ্যে নির্বাহী ও পুলিশ প্রশাসনকেও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনরিাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় বৈঠকে ছিলেন না আইজিপি।
সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বটি স্থানীয়ভাবে এসপির উপরই বর্তায়। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সেই সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছি- দল নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এমন কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ মনে করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে, কিন্তু আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণ ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন। সরকার ও দলের মধ্যে প্রভেদ বিবেচনা রেখে দল নিরেপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। দলীয় সরকারের অধীন মনে করে নিজেদেরকে দলীয় কর্মী বা সমর্থক ভাববেন না বা এমনভাবে আচরণ করবেন না, যাতে সরকারি বা গণকর্মচারি হিসেবে আপনাদের দল-নিরপেক্ষতা জনগণেরদৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথল্য সহ্য করা হবে না।
সিইসি বলেন, বৈঠকে ডিসি-এসপিরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে প্রচুর ‘ভোটার এডুকেশন’ দরকার। অনেকে প্রযুক্তি ভয় পান। এ কারণে অনেকে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে বুথ (ভোটকক্ষ) বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। ইসি এটি পর্যালোচনা করে দেখবে।
সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের কারণে বিভাজন রয়েছে। ইসি আশা করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। এটি কমিশনের কাজ নয়। রাজনৈতিক বিষয়ে ইসি অনুপ্রবেশ করতে পারে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিকদের সমাধান করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে। সংসদীয় ব্যবস্থা এমন যে সরকার ও দল আলাদা করা অনেক সময় কষ্টকর। অনেক সময় অলক্ষ্যে প্রভাব চলে আসতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে। আচরণবিধি মেনে গণকর্মচারী হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসি সেটা পর্যবেক্ষণ করবে।

এক কমিশনারের বক্তব্যে হৈ চৈ
মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপ-নির্বাচন ও জেলা পরিষদের ভোটকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় ডিসি ও এসপিদের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, সভায় কর্মকর্তারা নির্বাচনে জ্বালানি খরচ, আচরণবিধি প্রতিপালনে সম্পৃক্তদের ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলেন। বিষয়টি তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে ব্যাপক অভিযোগ এলেও কোনো ব্যবস্থা তো দেখা যাচ্ছে না; এ নিয়ে কথা না বলে উল্টো খরচ-ভাতা বাড়ানোর কথা আসছে। তখন কর্মকর্তাদের অনেকে হৈ চৈ করে প্রতিবাদ জানান।