সন্দ্বীপে বসতবাড়ির ভেতর গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউন, ঝুঁকিতে অর্ধশতাধিক পরিবার

16

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি: 
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বসতবাড়ির ভেতর ফায়ার লাইসেন্স ও গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার অধিকারে রাখার লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে এলপিজি (তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের গোডাউন। ফলে বিস্ফোরণ ঝুঁকিসহ অগ্নি দুর্ঘটনা শঙ্কায় রয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। অগ্নি দুর্ঘটনা ঝুঁকি এড়াতে গ্যাস সিলিন্ডারের গোডাউন অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। বিষ্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর অধীনে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস(এলপিজি) বিধিমালা ২০০৪ এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ করা যাবে না এবং লোকসমাগম হয় এমন স্থানের ১০০ মিটারের মধ্যে এলপিজি মজুদের স্থাপনা করা যাবে না উল্লেখ থাকলেও সরেজমিনে সন্দ্বীপ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের আসাদ উল্ল্যা বেপারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ির ভেতরেই গড়ে তোলা হয়েছে এপিজি সিলিন্ডারের লাইসেন্সবিহীন গোডাউন। গোডাউনের ভেতর শতাধিক গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার। বিধিমালার ৭০ ধারা অনুযায়ী এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং আগুন নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম মজুত রাখার নিয়ম থাকলেও গোডাউনের ভেতরে নেই অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬/৭ বছর আগে এলাকাবাসীর বাঁধা উপেক্ষা করে গোডাউন স্থাপন করেন যুবরাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন গ্যাসভর্তি শত শত সিলিন্ডার গোডাউনে মজুত করে রাখা হয়। গোডাউন থেকে এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। গোডাউনের পাশেই ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মোঃ হাসেম। তিনি বলেন, ‘এখনও আমার বসতঘরের টিনের চালের কিছু অংশ গোডাউনের ভেতরে ঢোকানো। জোরপূর্বক আমার জায়গা দখল করে গোডাউন বানানো হয়েছে। রান্নাবান্নার কাজে ঘরে সবসময় আগুন জ্বালাতে হয়। যেকোনো মুহূর্তে দূর্ঘটনা ঘটলে আমার পরিবারের কেউ বাঁচবে না।’ গোডাউনের পাশের আরেক বাসিন্দা মোঃ আলমগীর বলেন, ‘তাহের অনেক প্রভাবশালী। তার ভয়ে এলাকার লোকজন প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। সারাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। গোডাউনের আশেপাশে অর্ধশতাধিক পরিবার দিন রাত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি।’ বিধিমালায় প্রতিটি লাইসেন্সকৃত প্রাঙ্গণে লাইসেন্সধারীর নাম ও লাইসেন্স নম্বর প্রাঙ্গণের সাইনবোর্ড বা অন্যবিধভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। ফায়ার লাইসেন্স ও গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার অধিকারে রাখার লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে যুবরাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহের বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন আমার গোডাউন পরিদর্শন করেছেন। আমার কাছে লাইসেন্স আছে। আমি এখন চট্টগ্রাম আছি। লাইসেন্স দেখাতে পারবো না।’ লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার কিরিটি রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘নাজিরহাটে আবু তাহেরের একটি দোকানের ফায়ার লাইসেন্স আছে। কিন্তু বসতবাড়ির ভেতর গোডাউনের বিষয়টি তিনি আমাদের কাছে গোপন করেছেন। তাকে এলপিজি সিলিন্ডারের গোডাউন করার জন্য কোন ফায়ার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। আমাদের লাইসেন্স ছাড়া বিষ্ফোরক অধিদপ্তর থেকেও কোন লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব নয়।’ সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন এলপিজি গোডাউনে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।’