সজনীকান্ত দাস

2

বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তার অবাধ বিচরণ ছিল। জন্ম ১৯০০ সালের ২৫ আগস্ট তৎকালীন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার বেতালবন গ্রামে মাতুলালয়ে। পিতা হরেন্দ্রলাল দাস ও মাতা তুঙ্গলতা দেবী। পৈতৃক নিবাস ছিল বীরভূম জেলার রায়পুরে। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। এখানে রাজনৈতিক কারণে পড়াশোনা করতে না পারায় বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশনারি কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। তারপরে বারাণসীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় পদার্থবিজ্ঞানে এমএসসিপড়া শুরু করেন। অচিরেই ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সে বিদ্যাচর্চা শেষ করে অশোক চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত শনিবারের চিঠি পত্রিকায় যোগ দেন এবং ভাবকুমার প্রধানছদ্মনামে লিখতে থাকেন।
সজনীকান্ত শনিবারের চিঠি পত্রিকাটির একাদশ সংখ্যা থেকে সম্পাদক ও পরিচালক হন। এরপর তিনি প্রবাসী পত্রিকায় যোগ দেন। এছাড়া বঙ্গশ্রী ও দৈনিক বসুমতী পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বঙ্গীয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিভিন্ন সময়ের পদাধিকারী (সম্পাদক, সহ-সভাপতি, সভাপতি), গ্রন্থাধ্যক্ষ, আজীবন সদস্য ছিলেন। নিখিলবঙ্গ সাময়িকপত্র সংঘ, সাহিত্যসেবক সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতি, পরিভাষা সংসদ অ্যাডাল্ট এডুকেশন কমিটি ফিল্ম সেন্সর বোর্ড ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সজনীকান্ত কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গীতিকার এবং প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যের গবেষক হিসাবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ‘কামস্কাটকীয় ছন্দ’ কবিতা প্রকাশ করে বাংলা ব্যঙ্গ সাহিত্যে অবতীর্ণ হন। অন্যের রচনার ত্রুটি আবিষ্কার করতে থাকেন। তিনি প্রথম আক্রমণ করেন নজরুলকে। রবীন্দ্রনাথ-সহ খ্যাতিমান আধুনিক কবি ও ঔপন্যাসিক তার সমালোচনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু সাহিত্য নয়- সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রের সমস্যা সম্পর্কেও তিনি সমালোচকের ভূমিকা নিতেন এবং এতে তার নিজের প্রতিভার অনেকটাই অপচয় হয়েছিল। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসাবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল।
ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের গবেষণার ক্ষেত্রেও তিনি উৎসাহী ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ রচনা করেন এবং এটি প্রামাণ্য ইতিহাস হিসাবে গৃহীত হয়। সাহিত্য পরিষদের সাহিত্যসাধক-চরিতমালা-সহ বহু গ্রন্থ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেন।
তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের অধিক। পথ চলতে ঘাসের ফুল (১৯২৯), বঙ্গরণভূমে (১৯৩১?), মনোদর্পণ (১৯৩১?), অঙ্গুষ্ঠ (১৯৩১), রাজহংস (১৯৩৫), আলো-আঁধারি (১৯৩৬), কেডস ও স্যান্ডাল (১৯৪০), পঁচিশে বৈশাখ (১৯৪২), মানস-সরোবর (১৯৪২), ভাব ও ছন্দ (১৯৫২) এবং পান্থ-পাদপ (১৯৬০)।
শনিবারের চিঠি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তার প্রধান পরিচিতি। হিসাবে তীব্র অথচ হাস্যরসাত্মক সমালোচনার মাধ্যমে তিনি সমকালীন সাহিত্য কর্মকাÐে বিশেষ প্রাণসঞ্চার করছিলেন। ১৯৪৬ প্রকাশিত সজনীকান্ত বিরচিত ‘বাঙ্গালা গদ্যের প্রথম যুগ’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান সংযোজন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া