শুরু হল বৈকালিক চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাক এ মহৎ উদ্যোগ

12

এ সময়ে সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা শুরু হওয়ার বিষয়টি। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলাসহ দেশের ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত বৃহস্পতিবার থেকে চালু হলো এ বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সরকারের এ উদ্যোগ দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য মাইলফলক। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সেবা উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবা পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হলো। পরবর্তী সময়ে সব হাসপাতালে এই সেবা চালু করা হবে। বিশালসংখ্যক চিকিৎসক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই সুযোগ পাবেন। এতে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হবে। তবে কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া মৌখিক নির্দেশ ও আশ্বাসের ভিত্তিতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে চিকিৎসকরা নির্ধারিত সময়ের পর নির্দিষ্ট ফি নিয়ে রোগী দেখছেন। তবে মন্ত্রণালয়ের হঠাৎ সিদ্ধান্ত প্রচারের অভাবে জনগণের মধ্যে তেমন সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া কোন কোন হাসপাতালে অবকাঠামো ও জনবল এবং চিকিৎসক সংকটে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। প্রথম দিনে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও হাসপাতাল তত্ত¡াবধায়করা বলছেন, স্বল্প সময়ে বড় প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণরূপে সেবা চালু করতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। তবে নতুন এ সেবায় সন্তুষ্ট রোগীরা। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক দাউদ আদনান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১২টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ৩৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিছু ত্রুটি থাকলেও আশা করি দু-একদিনের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য সূত্রগুলো জানায়, নীতিমালায় অধ্যাপক পর্যায়ে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা; তাঁর সঙ্গে সহযোগী দু’জন পাবেন ৫০ টাকা করে। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালট্যান্ট পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালট্যান্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকরা পাবেন ২০০ টাকা করে; যাঁদের সহযোগী দু’জন পাবেন ৫০ টাকা করে। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় ছোট অস্ত্রোপচারের জন্য ৮০০ টাকা, সিজারের ক্ষেত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি ধরা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের সার্জারি, ডায়াগনস্টিক, ক্লিনিক্যাল, প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্ট ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় করা হয়েছে। একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে দুই দিন তিন ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং নীতিমালা ছাড়া এ সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, সরকারের এ উদ্যোগ জনবান্ধব। তবে এ উদ্যোগকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণ করতে হবে। এখন সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে যেসকল চিকিৎসক এ মহৎসেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন তারা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সম্প্রতি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকদের সেবা কার্যক্রম নিয়ে সমাজে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সরকারের এ উদ্যোগ জনগণের মাঝে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে। চিকিৎসকদের প্রতিও আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করি। তবে এ চিকিৎসাসেবা দেশের সব হাসপাতালে চালু করলে জনগণ আরো বেশি উপকৃত হবে।
আমরা জানি, দেশের সব জেলা বা উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। একেকটি হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে বহু কোটি টাকা। আরো বহু কোটি টাকার সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য। হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া জনবলের পেছনে বড় ধরনের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তারপর সেই হাসপাতাল জনগণকে কতটা সেবা দিচ্ছে! দেখা যায়, দুপুর একটা-দেড়টার মধ্যেই হাসপাতালের পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারও আগে বন্ধ হয়ে যায় টিকিট বিক্রি। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগীকে চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যেতে হয়। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে বরাবরই সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। লাইনের শেষে থাকা অনেকেই সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে গিয়ে গলাকাটা মূল্যে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়। এখন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবারও তারা চিকিৎসক দেখাতে পারবে। এ জন্য তাদের একটি সুনির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। এটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। বৈকালিক সেবায় রোগী দেখায় চিকিৎসককে সহায়তা করবেন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও নার্সরা। রোগী যে ফি দেবে তার ৫০ শতাংশ পাবেন চিকিৎসক। বাকি ৫০ শতাংশ যাবে হাসপাতালের তহবিলে অন্যান্য খরচ বাবদ। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিকিৎসাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরাও এই ধারণাটি এগিয়ে নিতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার থেকে সেই সেবা চালু করা হলো। এ সেবা আরো সম্প্রসারিত হবে এবং ক্রমান্বয়ে শহর ও নগরের সকল সরকারি হাসপাতালকে এর সাথে সম্পৃক্ত করা হবে-এমনটি প্রত্যশা দেশবাসীর।