শিক্ষক হৃদয় মন্ডল প্রসঙ্গে যা বললেন শিক্ষা উপমন্ত্রী

38

 

মুন্সীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি সৃষ্টি’, ‘গুজবের ভিত্তিতে মামলা’ এবং ‘জামিন না দেওয়া’ ভবিষ্যতের জন্য ‘অসুস্থ’ দৃষ্টান্ত হবে বলে মনে করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের চেষ্টাও চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মুন্সীগঞ্জের জনপ্রতিনিধির সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে বাসন্তী পূজার মহাসপ্তমীর দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্রে নাম উল্লেখ না করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক পাঠদান করা অবস্থায় সেখানে কী আলোচনা হয়েছে। সেই পাঠদানের পরিবেশে কী আলোচনা হয়েছে, সেটাকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। যেখানে কেউ বলেছে, কেউ শুনেছে, এ ধরনের গুজবের ভিত্তিতে একটি মামলা হল। সেই মামলা কিন্তু রেকর্ডও হল! আরও বিষয় যে এ মামলায় সেই শিক্ষককে জামিন দেওয়া হল না। আমি মনে করি, এটা সুবিচার নিশ্চিত করার পথে শুধুমাত্র অন্তরায় নয়, আগামী দিনে যে কেউ এ ধরনের গুজব তুলে যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে। সেক্ষেত্রে দেশের বিচার ব্যবস্থা, দেশের পুলিশ প্রশাসন তাদের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে ‘সবার সঙ্গে আলোচনা ও সমাধানের চেষ্টা চলছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানকার জনপ্রতিনিধির সাথেও কথা বলেছি।
গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মÐল দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন।
সেই ক্লাসের কথা কয়েকজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে এবং পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে কিছু শিক্ষার্থী ও ব্যক্তি এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। ওই অবস্থায় এ শিক্ষককে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
ঘটনার দুদিন পর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রেশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে হৃদয় চন্দ্রের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ২৩ মার্চ তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে জেল হাজতে পাঠানো হয়। খবর বিডিনিউজ’র
এ পরিস্থিতির নেপথ্যে অতীতের সামাজিক ‘কুশিক্ষার’ প্রভাব দেখছেন বলে উল্লেখ করেন নওফেল। তিনি বলেন, সমাজে যে বিভাজন দেখছি, শঙ্কা দেখছি, ভীতি দেখছি। শুধু শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের মাধ্যমে মনে করি না এগুলো দূর করা সম্ভব। বিশাল সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল শক্তিকে শক্তিশালীভাবে সেই সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “কারণ এর থেকে পিছপা হলে বাংলাদেশ কিন্তু পাকিস্তানে পরিণত হবে। এবং বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানে পরিণত হয় সেটা নির্ঘাত আফগানিস্তানে রূপান্তরিত হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি দেশে একটা বিশাল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন। যেখানে এখন ধর্মে ধর্মে বিভাজনের নোংরা রাজনীতি এবং সময় আসলেই নিজেকে অতিমাত্রায় শক্তিশালী প্রমাণের যে অপচেষ্টা। শ্রেষ্ঠত্ববাদী যে আলোচনা। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন সময় অপপ্রচারকারীরা যে ধর্মের মনগড়া অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ তা সামাজিক অস্থিতরতার সৃষ্টি করছে। আমরা এ বিষয়টা বারবার বলেছি। কেউ কেউ রাষ্ট্রবিরোধী, সংবিধানবিরোধী ও ধর্মের মনগড়া নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াজ করছে। আমরা দেখেছি একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান এমন নির্লজ্জভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ সবকিছুকে ঠুনকোভাবে তুলে ধরে। এটা পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজনীতিতে এ ধরনের ব্যক্তিদের আমাদের দেখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ- আমার, আপনার, ওদের সকলের। দেশের প্রতিটি নাগরিকের দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির উপর অধিকার আছে। সুতরাং আমার ধর্ম চর্চার অধিকার, আমার পূজা করার অধিকার, আমার এবাদত করার অধিকার কিন্তু কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষ অসম্প্রাদায়িক বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে আজ আমাদের এই ১৩ বছরের পথচলা। ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমাদের ধরে রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।