শহিদ ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খান

2

 

দেশ স্বাধীন করার জন্য নিজের জীবনবাজি রেখে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং সম্মুখ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন। এমন বীর সৈনিকদের মধ্যে শহিদ ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খান অন্যতম। তিনি চন্দনাইশ উপজেলার বরমার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫০ সালের ২ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরহুম আলী হোসেন খানের ৬ সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। তাঁর মাতার নাম মরহুমা রমিজা খানম। তিনি বরমা ত্রাহি মেনকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৮ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটি কোহাটে তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে করাচীর গ্রিট রুডস্থ বিমানবাহিনীর ছাউনীতে যোগদান করেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন বাঙালি সৈন্যদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করেছিলেন। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মর্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণায় তিনি উজ্জীবিত হয়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশমাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই বরমা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এডভোকেট আবদুল গফুর খানের পরামর্শে বিমান বাহিনী থেকে ছুটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামে চলে আসেন। পরবর্তীতে এফএফ-৩৩ ও ৩৪ এর সমন্বয়ে অপারেশন টিমের চীফ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বৃহত্তর পটিয়া (চন্দনাইশসহ), আনোয়ারা, বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় সফলভাবে অপারেশন পরিচালনা করেন। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর চন্দনাইশের বশরতনগর মাদরাসাস্থ রাজাকার, আলবদর, আল শামস-এর ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন। ওখানে সম্মুখযুদ্ধে রাজাকারদের একটি বুলেট তাঁর কপালে আঘাত হানে। সেখানে ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খান শহীদ হন। পরদিন ৩০ নভেম্বর সকালে রাজাকার বাহিনীর লোকজন শহিদ আবদুস সবুরের লাশ শঙ্খনদীতে ফেলে দেয়। তিনদিন পর ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালে শহিদ আবদুস সবুবের লাশ ভাসমান অবস্থায় চর বরমার শঙ্খনদীতে পাওয়া যায়। একই দিন বিকালে নিজ গ্রামের ঊষা পুকুরের পাড়ে শহিদ সবুরের লাশ দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি পান। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী যথাক্রমে এম আর ছিদ্দিকী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী, গণপরিষদ সদস্য ডা. বি এম ফয়েজুর রহমানসহ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ তাঁর কবরে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। তিনি অবিবাহিত অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান চন্দনাইশের গৌরব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সবুর খান তাঁর জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। তিনি রাজনীতির প্রেরণা ও সমাজের আদর্শ হয়ে থাকবেন চিরকাল। তাদের ত্যাগের ঋণ শোধ হবার নয়। শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক