শঙ্খের চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাটে ৩শ কোটি টাকায় নতুন সেতু হচ্ছে

48

মো. শাহাদাত হোসেন, চন্দনাইশ

চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ ও পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খনদীর চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে চৌকিদার ফাঁড়ি ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, স্থানীয় অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে বলে আশাবাদি স্থানীয়রা। ২০০১ সালের ১৫ মে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান চৌকিদার ফাঁড়ি ব্রিজঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। অবশেষে সে প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। তিনি প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর।
জানা গেছে, ২০০১ সালে আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৫ মে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান দোহাজারী লালুটিয়াতে সফরে গিয়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের কারণে সে প্রতিশ্রæতি আর বাস্তবায়ন হয়নি। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২২০ মিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ হিসেবে নির্মিত হবে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ জুনাইয়েদ আবছার চৌধুরী বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বর্ষা মৌসুমে নদীতে নৌযান চলাচলের যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নদীর পাড় থেকে ১২ মিটার উচ্চতায় এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে। ফলে ডিজাইন পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্রিজ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
জানা গেছে, মোগল আমল থেকে দোহাজারী ভারত উপ-মহাদেশের একটি দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দোহাজারীর চাগাচর গ্রাম থেকে চৌকিদার ফাঁড়ির পশ্চিমাংশ পর্যন্ত এলাকা জুড়ে মোগল ও ব্রিটিশের অনেক নিদর্শন এখনো বিদ্যমান। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে মোগল আমলে আরকান রাজ্য জয় থেকে শুরু করে জাপান, ব্রিটিশ মধ্যকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত দোহাজারী পালন করে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা। সে ঐতিহাসিক চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকায় শঙ্খনদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।
এ ব্রিজটি নির্মাণ হলে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের জনগণের। উপজেলার সীমান্তবর্তী শঙ্খনদীর উপর চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ হলে এ এলাকার সাথে দোহাজারীর দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সে সাথে এসব এলাকার উৎপাদিত সবজি ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে চৌকিদার ফাঁড়ি ঘাট। ঘাটের অপর পাশে সাতকানিয়ার পুরানগড় নয়াহাট, বাজালিয়ার বোমাংহাট ও বিশ্বেরহাট।
উভয় এলাকার হাজার হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও কোনো ব্রিজ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় এলাকার মানুষের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে যাতায়াত করা অসাধ্য ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার হাজার হাজার লোকজন বান্দরবান সড়ক হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে যাতায়াত করে থাকে। এসব এলাকার লোকজনকে দোহাজারী যেতে হলে সেখানে শঙ্খনদী পার হয়ে গেলেই সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। অথচ বান্দরবান সড়ক হয়ে কেরানীহাট অতিক্রম করে আসতে সময় লাগে এক ঘন্টারও বেশি। উভয় সীমান্তে সড়ক ব্যবস্থা অনেক উন্নত। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে না কোনোভাবেই।