রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তা

16

ঢাকা প্রতিনিধি

রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল কেনা যায় কিনা, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তেল কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে উপায় খুঁজে বের করতে হবে। একনেক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তা করছে সরকার। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
গতকাল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কষ্টে আছে। এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত এবং অন্যান্য রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি তেল কিনছে- তাহলে আমরা কিনতে পারি কিনা সেটা দেখতে হবে। এর জন্য রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. এম শামসুল আলম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল কেনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেছেন। রাশিয়া বলছে তারা কারেন্সি সোয়াপে যাবে। আমাদের হয়ত রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা বলে একটা পদ্ধতি বের করতে হবে।
রাশিয়ার নিজস্ব মুদ্রা হলো রুবল। সেদেশের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থাপনায় গেলে রুবল এবং টাকার মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে।
বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থনৈতিক মন্দার আভাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী কোন দেশ এর বাইরে নয়। চলমান যুদ্ধ কোথায় যাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রী ব্যয় করার ক্ষেত্রে আবারও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যয় আমরা সাবধানে করব। কল্যাণমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাব কিন্তু এই মুহূর্ত যেটা খুব জরুরি নয়, সেটা পরে করা যাবে।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাতে ইতিবাচক কাজ হচ্ছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডালারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক। গতবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স ১০ শতাংশ বেশি এসেছে। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় ভাল। এসকল বিবেচনায় আমরা মনে করি- ‘খাদে আমরা পড়ব না বরং আমরা এই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াব।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধীরে ধীরে কমছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে বলা হয়েছে দেশে এর দাম সমন্বয় করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন থেকে এখন বিপুলসংখ্যক জাহাজ খাদ্য নিয়ে রওনা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে দাম কমছে। এসব বিবেচনায় মনে করি, যে ভয় ছিল সেটা কেটে যাবে। ৬ মাসে আগে আমরা যে অবস্থায় ছিলাম সেখানে আবার ফিরে যাব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, আজকে নির্দেশনা এসেছে। আমরা অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে যে সম্ভাব্যতা আছে, সেগুলো অবশ্যই অনুসন্ধান করবো।
রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের যে সক্ষমতা আছে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার, সেটির সক্ষমতা যদি আমরা করে নিতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরাও আনতে পারবো।
তেল আমদানি করলে কূটনৈতিক সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে নিচ্ছে। তৃতীয় দেশ হিসেবে অনেকে নেয়। কিন্তু আমি যতদূর শুনেছি পরিশোধনাগারের একটি সীমাবদ্ধতা আছে। এটি যদি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি, তবে আমাদের পক্ষেও আনা সম্ভব হবে।
কীভাবে অর্থায়ন হবে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।
তেল আমদানি করলে ঝুঁকিতে পড়বো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি এখনও অনেক দূরের বিষয়। সবে আমাদের অনুসন্ধান করার কথাটা আসলো। সুতরাং আমরা অনুসন্ধান করে দেখবো। যদি সে রকম কোনও ঝুঁকি থাকে, তবে অন্য যে বিকল্প সুযোগ আছে সেটি দেখবো।
অন্য কোন কোন দেশ থেকে তেল আনা যাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। সম্প্রতি সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওরাও দিতে প্রস্তুত আছে। কাতারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো আছে। আমরা এলএনজি আমদানি করি। সুতরাং আমাদের বিকল্প অনেক আছে।
ইরান থেকে তেল আমদানি করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি আরেকটি বিকল্প সুযোগ। ইরানের ওপরও কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে। ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর একটি আলোচনা চলছে। যদি এর ফল ইতিবাচক হয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞাগুলো দ্রুতই তুলে নেওয়া হবে। তখন আরেকটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে ইরানের যে তেল এখানে কতটুকু পরিশোধন করা যাবে সেটি দেখতে হবে।