যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে নগরীর ৪ মোড়ে ‘মিডআইল্যান্ড’

82

মনিরুল ইসলাম মুন্না

নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট ও জিইসি মোড়ে দেয়া হয়েছে লেফ্ট লেন ও মিড আইল্যান্ড। ফলে সোজা চলাচলকারী গাড়ি বাম দিকে গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে গন্তব্যে যেতে পারবে। আগের মত উল্টোপথে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। এতে কমেছে গাড়ির জটলা ও যানজট এবং যাত্রী-চালকদের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। গতকাল সরেজমিনে পরিদর্শন ও ট্রাফিক (উত্তর) কার্যালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। জানা গেছে, নগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে ছোট-বড় পরিবহনের সংখ্যা, বিপরীতে বাড়ছে না সড়ক। ২০ বছর আগে যা ছিল, বর্তমানেও তা-ই রয়েছে। ফলে সড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া মোড়কেন্দ্রিক তৈরি হচ্ছে জটলা।ফলে যাত্রী-চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে জানান তারা। তাই নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে সিএমপি’র ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। এ পদ্ধতি আসন্ন রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে চালু করেছে ট্রাফিক উত্তর বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় কাঁচাবাজারের সামনে এম.এ মান্নান ফ্লাইওভারের কারণে মূল সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া কাঁচাবাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া সড়কে (হাজী চাঁন মিয়া সড়ক) নিয়মিত ছোট পরিবহন চলাচল করে। অন্যদিকে কাপাসগোলা সড়ক দিয়ে আসা পরিবহনগুলো ডানে মোড় নিতে গেলে বাঁধে বিপত্তি। তিনদিকের গাড়ি মুখোমুখি হওয়াতে সৃষ্টি হয় জটলা। তবে ট্রাফিক বিভাগ এ সড়কের মাঝখানে তৈরি করেছে মিড আইল্যান্ড। এতে মুরাদপুরের দিক থেকে আসা গাড়িগুলো সোজা ও কাপাসগোলা থেকে আসা গাড়িগুলো আইল্যান্ড ঘেঁষে সহজে ডানে মোড় নিতে পারছে। কোনো গাড়ি আর মুখোমুখি হচ্ছে না। ফলে যানজট কমেছে ৭০ শতাংশ। এছাড়া বহদ্দারহাট ঘড়ি টাওয়ার মোড়ে দেয়া হয়েছে লেফ্ট লেন। এর মাধ্যমে কালুরঘাটগামী যানবাহনগুলো সহজে বামে মোড় নিয়ে লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে এবং সোজা যাওয়া (শাহ আমানত সেতুগামী) যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে যেতে পারছে। উল্টোদিকে, কাশবন হোটেলের সামনে থেকে কাপাসগোলা সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পরিবহনগুলো লেফ্ট লেনের ভিতর দিয়ে সহজে বামে মোড় নিতে পারছে।
মুরাদপুর মোড়ে পাঁচলাইশ সড়ক দিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে চলাচল করতে পারছে। একই মোড়ে অক্সিজেনগামী যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে চলাচল করতে পারছে। ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ে প্রবর্তক সড়ক দিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে চলাচল করতে পারছে। একই মোড়ে অক্সিজেন সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে যেতে পারছে। লেফ্ট লেন চালু করার আগে মুরাদপুর সড়ক দিয়ে যাওয়া যানবাহনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ সিগন্যালে অপেক্ষা করতে হতো।
জিইসি মোড়ে গোল পাহাড় দিয়ে চলাচল করা যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে যেতে পারছে। তবে ওআর নিজাম রোড আবাসিক এলাকার সামনে আগে যে মিড আইল্যান্ড গ্যাপ ছিল, তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে যানবাহনগুলোর ইউটার্নের প্রয়োজন পড়লে গোলপাহাড় মোড় থেকে করতে হচ্ছে। অন্যদিকে খুলশী জাকির হোসেন সড়ক দিয়ে চলাচল করা যানবাহনগুলো লেফ্ট লেনের ভেতর দিয়ে বামে মোড় নিয়ে যেতে পারছে।
ট্রাফিক বিভাগ জানায়, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কমপক্ষে ৫৭ জন সার্জেন্ট প্রয়োজন। বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। তাই স্বল্প জনবল নিয়ে ইনোভেটিভ সিস্টেম ম্যানেজমেন্টের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে যারা মোড়কেন্দ্রিক পার্কিং বা যানজট তৈরি করছেন, তাদের মামলা ও জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে অবৈধ পার্কিং করার দায়ে ২৮৬টি এবং যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ২৯১টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ফেব্রæয়ারি মাসে অবৈধ পার্কিং করার দায়ে ২৯৪টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া যান চলাচলে বাধা প্রদান করায় ২৮৬টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা প্রদান করা হয়।
এদিকে উদ্ভাবনী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা। তারা বলছেন, ‘একটু দেরি হলেও আগে যে মোড় কেন্দ্রিক যানজট তৈরি হতো, এখন তা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে এসেছে। ট্রাফিক বিভাগ যে উদ্যোগটি নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।’
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘পবিত্র রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তারমধ্যে এটা একটা। আমরা প্রথমে কয়েকদিন পরীক্ষামূলক লেফ্ট লেন দিয়ে দেখেছি, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, বা কোনো প্রতিক্রিয়া আসছে কি না। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে দেখার পর আমরা ফিডব্যাক ভাল পাওয়াতে বিষয়টি বাস্তবায়ন করেছি। তাছাড়া আমাদের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) এবং সার্জেন্টরা এটাতে ভাল নজরদারি করছেন। যারা মোড়কেন্দ্রিক যানজট তৈরি করছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে সেজন্য আমরা এমএম আলী রোড ও গরীব উল্লাহ শাহ সড়কেও মিড আইল্যান্ড দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাথে অবৈধ পার্কিং ও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সড়ক ও মোড়কেন্দ্রিক পথচারী পারাপারের বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছি, সেখানে যদি জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ দেয়া হতো, তবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট আরও সহজতর হতো।’