মোদীকে চিঠি কঙ্গনাসহ ৬১ জনের

29

ভারতে সাম্প্রদায়িক হামলা বাড়ছে বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন বলিউড সংশ্লিষ্ট ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এবার তাদের অভিযোগ নাকচ করে মোদীকে পাল্টা চিঠি দিলেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতসহ ৬১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
কঙ্গনার চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ৬১ জন নাগরিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, পূর্বের চিঠির স্বাক্ষরকারীরা নকশালপন্থীদের ভয়াবহ তান্ডবলীলা বিষয়ে নীরব কেন? তারা রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সাধারণ ঘটনার তকমা দিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ কঙ্গনাদের। বাংলাদেশের মতো ভারতেও বেড়েছে গণপিটুনিতে মৃতের সংখ্যা। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অভিযোগ উঠেছে, ‘জয় শ্রীরাম’ বলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের ঝাড়খন্ডেশামস তাবরেজ নামের একজনকে মোটরবাইক চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মারা হলে এই আতংক আরও ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
এই ঘটনার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। পিছিয়ে থাকেনি বলিউডও। ২৩ জুলাই পরিচালক মনি রতœম, অনুরাগ কাশ্যপ, শ্যাম বেনেগাল, অপর্ণা সেনসহ ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে লিখিত চিঠি দিয়ে তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতেই পাল্টা চিঠি দিলেন আরও ৬১ জন নাগরিক।
বলিউডের ৪৯ জনের লেখা চিঠিতে বলা হয়, ভারতে উগ্র ধর্মীয় বিদ্বেষ বেড়েছে। ধর্মীয় ভিন্নতা থেকে উদ্ভুত ঘৃণা ও অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। মুসলমান ও উপজাতিসহ সকল সংখ্যালঘুদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই চিঠিতে। ভারতের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বাড়ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাক্ষরকারীরা। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে শুক্রবার মোদী সরকারকে পাল্টা চিঠিতে অভিযোগগুলো নাকচ করে দেন বলিউড তারকা ও বিশিষ্ট অধ্যাপকসহ ৬১ জন নাগরিক।
তাদের বক্তব্য, ৪৯ জনের ওই চিঠির বক্তব্য ‘সার্বিকভাবে সত্য নয়’। বরং ওটা নাকি নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণীত। ৬১ জনের চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, উপজাতি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যখন নকশালপন্থীদের ভয়াবহ হামলায় শিকার হয়, তখন প্রথম চিঠি দাতারা নীরব ছিলেন কেন? কাশ্মীরে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেয় তখন তারা নীরব ছিলেন। ভারতকে যখন ‘টুকরো টুকরো’ করার হুমকি দেওয়া হয়, তখন তারা নীরব ছিলেন। যখন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশদ্রোহী শ্লোগান দেওয়া হয়, তখনও তারা নীরব ছিলেন কেন?
মোদী সরকারকে ৬১ জনের লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২৩ জুলাইয়ে প্রদত্ত ৪৯ জনের চিঠিতে ভারতের আন্তর্জাতিক মানদন্ড ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। দেশকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টাকে খাটো করা হয়েছে। কোটি ভারতবাসীর জাতীয়তাবোধ ও মানবিকতাকে অসম্মান করা হয়েছে। মোটের ওপর এটা একটা মিথ্যা বিবৃতি। কঙ্গনার সঙ্গে এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন গীতিকার প্রসূন যোশী, নৃত্যশিল্পী সোনাল মানসিং, সিনেমা নির্মাতা মধুর ভান্ডারকর ও বিবেক অগ্নিহোত্রী প্রমুখ। এছাড়া শান্তি নিকেতনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিও স্বাক্ষর করেছেন এই চিঠিতে। এদের মধ্যে রয়েছেন, বিশ্ব ভারতীর অধ্যাপক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, অবাধ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনোজ দীক্ষিত, গবেষক অনির্বাণ গাঙ্গুলি, সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্ত ও অভিনেতা বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি প্রমুখ।