মিলো

42

 

শাব্বাব নামের একটি ছোট্ট ছেলে লক ডাউনের গৃহবন্দি জীবনে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিলো। সে মাঠে ময়দানে খেলতে ভালোবাসতো। ফ্ল্যাট বাড়ির বারান্দা বা বেলকনিতে তার মনটা ভরতো না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মাঠ তার বিশেষ পছন্দ। কতদিন স্কুলে যায়না, বন্ধুদের সাথে খেলতে পারেনা মাঠে।

তাদের অনেক গাছ আছে ঘরের টবে লাগানো। সবুজ গাছগুলোতে পানি ঢালেন মামণি। দেখতে বেশ ভালো লাগে। সময় পেলে কানের হাতের কিছু অলংকার বানায় ওর মামণি নানা রঙের পুথি স্টোন দিয়ে খুব সুন্দর। বিকেলে বাবা অফিস থেকে এলে সে সাইকেল চালায় শরফাদের সাথে।
ইদানিং ওর খুব ইচ্ছে হয় বিড়াল পুষতে। মামণিকে বলেছে সে। কিন্তু খুব একটা উৎসাহ দেখায় না তার মামণি। বাবাকে প্রায় বলে ও বাবা একটা বিড়াল নিয়ে এসোনা। আনবো আনবো করে প্রায় ভুলে যান ওর বাবা।

অগত্যা খালা মণিকে কাঁদো কাঁদো গলায় ফোন দেয়-‘ও খালামনি একটা বিড়াল নিয়ে আসো তুমি। বাবা আর মামণি আমাকে দেয়না তো।’
খালামনির কেমন কান্না চলে আসে।আর দেরি না করে শাব্বাবের জন্য বিড়াল নিয়ে আসেন খালামনি। মামণি বলে ওঠেন -‘শেষ পর্যন্ত তোকে ম্যানেজ করে ফেলেছে শাব্বাব। তাইতো সবাই বলে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।’ হো হো করে হেসে ওঠে সবাই।

শাব্বাবের কি আনন্দ চোখে মুখে। বিড়ালটাকে প্রথমে মিনি নামে ডাকতে শুরু করে। বাটি ভরে দুধ খেতে দেয়। মিনিকে খাওয়ানো গোসল করানো সব লুকিয়ে করতে থাকে।
মামনি ডেকে বলে -‘আমি বিড়াল ভয় পাই প্রথম প্রথম তাই কাছে আসিনি। লুকিয়ে নয়। সবার সামনেই করতে পারবে তো।’

মিনিকে ওর পাশে ঘুম পাড়ায়। বাবা কিছু খাবার কিনে আনে আর বলে ওর নাম পরিবর্তন করে আজ থেকে মিলো ডাকবো।

এরপর থেকে মিলো নামটা সারা বাড়ির সবাই ডাকতে থাকে। মাঠে ঘাটে যেতে না পারার দুঃখটা কিছুটা কমেছে। মিলোকে নিয়েই তো বেশ ভালো দিন কাটছে।

প্রতিদিন ফেসবুকে মিলোর সাথে শাব্বাবের খুনসুটির ছবি ও দেয়া হচ্ছে। সেদিন স্ট্যাটাস ও লিখছেন তাঁর মামণি। সেটা দেখে তাঁর লেখক আন্টি ফোন করে বলেন-‘খুব খুশি হয়েছি শাব্বাব। তোমার সাদাত চাচ্চুর কবুতর ডিম পেড়েছে। চাচা -ভাতিজা। এভাবে আত্মীয় থেকে আত্মীয়ের মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক জীবে প্রেম। আমি মিলোকে নিয়েগল্প লিখবো কেমন।’

ফোনটা রাখার পর শাব্বাব হাততালি দিয়ে বলে কি মজা কি মজা মিলোকে নিয়ে গল্প লিখবেন আন্টি।
কিছুদিন পর শাব্বাবের মামণি আর বাবা সকালে পত্রিকা খুলে দেখান- দেখো তোমার আন্টির লেখা। কোনটা বলতো?
ও বুঝছি, মিলোর গল্প। দেখি দেখি বলে পড়তে নেয় শাব্বাব।