মিলার ঝড়ে ম্লান হাসারাঙ্গার হাসি

7

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচে শেষ হাসিটা হেসেছে সাউথ আফ্রিকা। শুরুতেই লাহিরু কুমারা-দুশমন্থ চামিরার বোলিংয়ে চাপে পড়া প্রোটিয়ারা শেষমুহূর্তে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে হারিয়েছে পথ। কিন্তু ক্রিকেটের কিলার খ্যাত ডেভিড মিলারের শেষ ওভারের থ্রিলারে এক বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছেছে প্রোটিয়ারা।
১৪৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে সাউথ আফ্রিকা। তখন পঞ্চম ওভারের খেলা চলছে, ওভারের তৃতীয় বল করতে দৌড়লেন লাহিরু কুমারা। আগের ওভারেই দুই ওপেনার রেজা হেন্ডরিকস এবং কুইন্টন ডি কককে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন দুশমন্থ চামিরা। ১৪২ রান করেও ম্যাচ জিততে হলে প্রয়োজন বিপক্ষে দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার। আর, সেটাই যেন নিজের তৃতীয় বলটা করতে এসে করলেন শ্রীলঙ্কান পেসার।
কুমারার ফুল লেংথের বলটা রাসি ফন ডার ডুসেন করলেন ডিফেন্স। দুই ড্রপ খেয়ে বলটা গিয়ে থামলো বোলারের হাতেই। সাধারণত বোলাররা ফিরে গেলেও কুমারা ফিরলেন না। উল্টো থ্রো করলেন ডুসেনের স্ট্যাম্পকে লক্ষ্য করে। স্ট্যাম্প নয়, ডুসেন নিজের শরীরটাকে বাঁচাতে এগিয়ে দিলেন ব্যাটটাকে। শ্রীলঙ্কা দল আপিল করলেন ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ উইকেটের। থার্ড আম্পায়ার আউট না দিলেও লঙ্কানরা যে খেলবেন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট, বার্তাটা ঠিকই দিতে পেরেছেন ততোক্ষণে।
চাপটা ভালোমতোই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। ফলাফল, অষ্টম ওভারের শেষ বলে রানআউট ডুসেন! আউট হয়ে অসহায় ডুসেন পিচের ওপরেই থাকলেন বসে, অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা দেখলেন লঙ্কানদের বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে উঠতে। চাপটাকে পেছনে ফেলে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় এইডেন মার্করামকে নিয়ে অধিনায়ক; ১০ ওভার শেষে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৬২। জয়ের জন্য বাকি ১০ ওভারে প্রয়োজন ৮১।
মার্করাম-বাভুমা মিলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন সঠিকভাবেই। ১৫তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শেষ বলে বোল্ড হয়ে মার্করাম প্যাভিলিয়নে যাওয়ার আগে দুজনে মিলে গড়েছেন ৪৭ রানের জুটি। হাসারাঙ্গাকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন মার্করাম। অথচ তার আগের বলেই দলকে এনে দিয়েছেন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বাউন্ডারি। ১৫ ওভার শেষে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৯৬।
হাসারাঙ্গা নিজের শেষ ওভার বল করতে এসেছিলেন ১৮তম ওভারে। এসেই টানা দুই বলে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়েছেন ৩৬ রান করা অধিনায়ক বাভুমা এবং কোনো রান না করা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। আগের ওভারের শেষ বলে উইকেট পাওয়ার কারণে টানা তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন লঙ্কান তারকা; পিচে তখনও বাধা হয়ে ডেভিড মিলার।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৫ রান। প্রথম বলেই কাগিসো রাবাদা এক নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন ডেভিড মিলারকে। টানা দুই বলে ডেভিড মিলারের দুই ছক্কা। ম্যাচ ততোক্ষণে নিজের করে নিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতার। পরের বলে এক নিয়ে ম্যাচ ড্র করলেন মিলার। পঞ্চম বলে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে রাবাদার চার এবং সাউথ আফ্রিকার জয়।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাথুম নিশানকার চমৎকার ইনিংসে ১৪২ রান করে শ্রীলঙ্কা। এই ওপেনার ৫৮ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান চারিথ আসালঙ্কার। এই দুজন ছাড়া কেবল দাসুন শানাকা (১১) যেতে পেরেছেন দুই অঙ্কের ঘরে। ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন কুশল পেরেরা (৭), ভানুকা রাজাপাকসে (০), অভিষ্কা ফার্নান্ডো (৩) ও হাসারাঙ্গা (৪)।
দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সফল বোলার তাবরেজ শামসি। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা এই স্পিনার ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। প্রিটোরিয়াস ৩ ওভারে ১৭ রান খরচায় পান ৩ উইকেট। আর আনরিখ নর্কিয়া ২৭ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।
গ্রুপ টেবিলে ৩ ম্যাচে ২ জয় ১ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে বাভুমারা। বাংলাদেশকে হারানো লঙ্কানদের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। তাদেরও বিশ্বকাপ থেকে কাগজে-কলমে অনেকটা বিদায় হয়েছে!