মিলাদে মোস্তফা (স.) : কিছু অলৌকিক ঘটনা

4

 

হযরত আদম (আ.) থেকে ঈসা (আ.) পর্যন্ত সকল পয়গম্বর এবং তত্ত¡দর্শী মহাপুরুষগণ প্রত্যেকেই হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। তাই তিনি আল্লাহ পাকের প্রতিশ্রæত পয়গম্বর। হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহু নূরী’ অর্থাৎ আল্লাহপাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন আমার নূর। অতএব, এ কথা অনায়াসে বলা যায় যে, আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীবকে পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত সৃষ্টি তারই নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই পৃথিবীতে তাঁর আগমন হয়েছে অস্বাভাবিক নিয়মে, আল্লাহরকুদরতের মাধ্যমে। আজ তাঁর আগমনের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষিত সবাই। চন্দ্র, সূর্যে, গ্রহ-নক্ষত্রে, পাহাড়-পর্বতে, সাগর-নদী, জ্বীন-ইনসানে, ফুলে ফুলে, হুরে-নূরে, ফেরেশতাকুলে আনন্দের রব উঠেছিল। বিশ্ব-প্রকৃতির অন্তর জুড়ে এক পরম কৌতুহল ও জিজ্ঞাসা জেগেছে, কোথায়, কবে, কীভাবে, রহমতে দোআলম নবীজির আত্মাপ্রকাশ পাবে। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার সুবহে সাদিকে। আরবের মরু দিগন্তে মক্কা নগরীর স্বর্গীয় এক কুঠিরে মহীয়সী রমনী মা আমিনা দেখতে পেলেন, এক অপূর্ব নূরে আসমান-জমিন আলোকিত হয়ে গেছে। সেই আলোতে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ তারা ঝলমল করছে। কার যেন আজ শুভাগমন কার যেন আজ অভিনন্দন, যুগ-যুগান্তরের প্রতিক্ষীত সেই না আসা অতিথির আগমন মুহূর্ত আজ যেন আসন্ন হয়ে উঠেছে। তারই অভ্যর্থনার জন্য আজ যেন ব্যাকুল হয়ে উঠছে কুল মাখলুকাত। আজ সেই আনন্দে সবাই আত্মহারা। আসমান জমিনে ফেরেশতারা ছোটাছুটি করছে। তোরণে-তোরণে বাঁশি বাজছে। সবাই আজ বিস্মিত, পুলকিত, কম্পিত, শিহরিত। খসরুর রাজপ্রসাদের স্বর্ণচূড়া ভেঙ্গে পড়েছে। কাবা ঘরের রক্ষিত মূর্তিগুলো ভুলুন্ঠিত হয়েছে।
হযরত বিবি হাওয়া, বিবি রহিমা, বিবি হাজেরা, বিবি মরিয়ম সবাই আমিনার শিয়রে দÐায়মান। বেহেশতি নূরে সমস্ত ঘর আলোকিত। খুশবুতে বাতাস আজ সুরভিত। এক ¯িœগ্ধ পবিত্র চেতনার পর মা আমিনা চোখ মেলে দেখলেন-কোলে তাঁর পূর্ণিমার চাঁদ হাসেছে। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত সৃষ্টি অন্তর ভেদিয়া ঝঙ্কৃত হল মহানন্দের ধ্বনি, মারহাবা ইয়া রাসুলুল্লাহ, মারহাবা ইয়া হাবীবাল্লাহ। কবিগণ গেয়ে উঠলেন, আজ আরশে আসলেন মোদের নবী কামলিওয়ালা, যার পরশে ত্রিভূবন আজ হলো মতোয়ারা” সকল সৃষ্টির সূচনা এই নূরে মোহাম্মদী (সা.) থেকে। তাই তিনি, নিখিল বিশ্বের মূল। মানবজাতির চরম ও পরম আদর্শ কুল মাখলুকাতের অনন্ত কল্যাণ, মানবজাতির চরম এবং পরম আদর্শ রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রিয় নবী দুনিয়াতে তশরীফ আনার কয়েকদিন পর, আরব দেশের চিরাচারিত প্রথানুযায়ী ‘বনিসা’ গোত্রের ধাত্রী প্রিয়নবীর দুধুমা বিবি হালিমা তাঁকে নিজ গৃহপানে নিয়ে গেলেন। হালিমার উটনি ছিল বয়স্ক ও দুর্বল। রহমতে দোআলম নবীর পরশ পেয়ে উটনি যেন নব যৌবন লাভ করল। হালিমার সঙ্গী অন্য সকল ধাত্রীগণকে পিছনে রেখে দয়াল নবীকে পিঠে নিয়ে উটনি বিবি হালিমার বাড়িতে উপস্থিত। বিবি হালিমা বর্ণনা করেন ‘আমি শিশু নবীকে আমার ঘরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এক আশ্চার্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আমার গৃহে পালিত দুর্বল মেষগুলো অস্বাভাবিকভাবে পরিপুষ্ট হয়ে উঠল এবং অধিক পরিমানে দুধ দান করতে লাগল। খেজুর বৃক্ষে প্রচুর পরিমানে খেজুর ফলন আমার কোনো অভাব রইল না। আমি আরো একটি আশ্চার্য্য ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, শিশু নবী যখন আমার স্তন পান করতেন তখন মাত্র একটি স্তনই পান করতেন। আমার মনে হতো তিনি যেন জেনে শুনে অপর স্তনটি তার দুধ ভাই এর জন্য রেখে দিতেন। প্রিয় নবীজির ৬৩ বছর হায়াতে অসংখ্য মোজিজা সংগঠিত হয়েছে। পবিত্র হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমানিত মোজিজা সমূহ থেকে একটি মোজিজা পাঠক সম্মুখে তুলে ধরলাম। আবু নাঈম হযরত আবু সাইদ খুদরী (র.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, হযরত রাসূলে পাক (সা.) এশার নামাজ আদায় করার জন্য বের হলেন। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল, আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। বাইরে হযরত কাতাদাহ্ ইবনে নোমান (র.)কে দেখে রাসূলে পাক (সা.) বললেন, হে কাতাদাহ (রা.) যদি নামাজ পড়তে চাও পড়ে নাও। তারপর নামাজ শেষ হবার পর রাসূলে খোদা (সা.) হযরত কাতাদার হাতে একটা লাকড়ি দিয়ে বললেন, এটা নিয়ে যাও” এ লাকড়ি তোমার দশ কদম আগে ও দশ কদম পেছনে আলোকিত করবে। নবীজির নুরানী স্পর্শে বাক্কা নগরী পবিত্র মক্কা নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। ইয়াসরীব নগরী হয়েছে মদিনাতুল মনোয়ারা। মহান আল্লাহ হচ্ছেন। সৃষ্টি জগতের কোনো বস্তুর জন্য নবীজি লালায়িত নয় বরং আরশ-কুরছি লৌহ্-কলাম, জান্নাত-জাহান্নাম, হুর-পরী, সকলই নবীজির দীদারের আশায় ব্যাকুল, তাই নবীজি মাতলুব, কোরআন, কিতাব, কাবা, জান্নাত, লা-মকাম, আরশ-কুরছি নবীজির তালেব। কেননা নবীর সদকায় এই সকল আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন। বান্দার পক্ষে যত প্রকার ইবাদত বন্দেগী রয়েছে সকল ইবাদত বন্দেগীর ভিতরে নবী করিম (সা.) এর স্মরণ থাকতে হবে। অন্যথায় যাবতীয় বন্দেগী বান্দার মুখে নিক্ষেপ করা হবে কঠিন হাশরের মাঠে। পরিশেষে বলবো রাসূলে পাক (সা.) ও আহলে বাইতে রাসূলগণকে ভালোবাসতে হবে। ফরজ কার্যাদির সাথে সাথে সুন্নাতে রাসূল (সা.) পালন করতে হবে। রাসূলে পাকের প্রকৃত উত্তরসূরি মহান আউলিয়ায়ে কেরামগণের অনুসরণ অনুকরনের মাধ্যমে নিজের চরিত্র গঠনপূর্বক ইলমে শরীয়তের জ্ঞানের সাথে সাথে ইলমে তাছাউফ অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয়ে ইনসানে কামেলগণের সান্নিধ্য অর্জন করতে হবে। তবেই ব্যক্তি হবে খাঁটি ঈমানদার, আশেকে রাসূল। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে নবী প্রেমিক হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সাজ্জাদানশীন, নজির ভান্ডার দরবার শরীফ