মায়ের পাশে শায়িত প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব জয়নুল

112

চট্টগ্রামের লোহাগাডা উপজেলার চুনতিতে মায়ের কবরের পাশেই শায়িত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের মরদেহ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪ টার সময় তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে দুপুর ২ টার সময় সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে করে চুনতীতে পৌঁছানো হয় তার লাশ। এর পর সেনাবাহিনীর বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্সে করে লাশ নেয়া হয় তার বাড়িতে। বাড়িতে আগে থেকে অবস্থান নেয়া আত্মীয়-স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আসরের নামাজের পরপরই ১৩ একর বিশিষ্ট চুনতির ঐতিহাসিক সীরত ময়দানে জানাজার জন্য মরদেহ আনা হয়। জানাজার আগ মুহূর্তে পরিবারের পক্ষে কথা বলেন তাঁর বড় ভাই ইসমাইল মানিক।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন চুনতী হাকামিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রবীণ মোহাদ্দিস মাওলানা শাহ আলম। এরপর সামরিক প্রথা অনুযায়ী লাশ নেয়া হয় কবরস্থানে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদানের পর লাশ দাফন করা হয়। মরহুমের ফুফাতো ভাই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ার কামাল বলেন, ১৯৭৯ সালের ১৯ ফেব্রূয়ারি মা মেহেরুন্নেছা মারা যান। এরপরের বছরই ১৯৮০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মারা যান তাঁর বাবা ইসহাক মিয়া। তিনি চুনতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁদের দু’জনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আর আজ মায়ের কবরের পাশ ঘেঁষেই কবরস্থ করা হয় তাঁদের ছেলে মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনকে।
লোহাগাডার সার্বিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে ভূমিকা রাখা এ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া বিরাজ করছে পুরো লোহাগাড়া উপজেলা জুড়ে।
উল্লেখ, গত ১৭ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত বুধবার তার মরদেহ দেশে আনা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় ঢাকা সেনানিবাসে নামাজে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে লাশ আসে লোহাগাড়ায়।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি মুন্সেফ বাজারের পশ্চিম পাশে সিকদার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদীন। ছাত্র জীবনে চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসায় পড়ালেখার হাতেখড়ি। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে এসএসসি ও ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। দুই বছর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়িত্ব পালনকালে তার সাহসী নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার কারণে অনেক জটিল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হয়। দেশের প্রতি নির্ভয় আত্মত্যাগ, পাহাড়সম মানসিক দৃঢ়তা ও দেশ সেবার মহান ব্রত বিবেচনায় তাকে মর্যাদাপূর্ণ ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
একজন চৌকস সেনা অফিসার হিসেবে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও কর্মদক্ষতার কারণে শান্তিরক্ষী মিশন থেকে ফিরে আসার পর তাঁকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁকে এসএসএফ এর মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। এপ্রিল মাসে মেজর জেনারেল পদে তিনি পদোন্নতি লাভ করেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে তিনি দায়িত্বরত ছিলেন।