মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (১২০৭-১২৭৩)

124

সুফি সাধক ও কবি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তুরস্কের কুনিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। তার রচিত ফার্সি ভাষার গ্রন্থ ‘মসনবী’ মুসলমানদের কাছে খুবই সন্মানিত ও আদরণীয়। পাশ্চাত্যেও এটি বহুলপঠিত বই। তিনি ইসলামের মৌল ধারণা তাওহীদকে বাতেনীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আজও বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় আলোচনা সভায় তার রচিত কবিতা আবৃত্তি করা হয়। রুমী ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পারস্যের বলখ শহরের কাছে (বর্তমান আফগানিস্তানের অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন ইসলামী ফিকহ, ধর্ম ও সুফিবাদের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যে ধারক এক বংশের উত্তরাধিকারী। বাহাউদ্দিনের লেখা মা’রিফ (আত্মাকে ভালবাসার কথা) নামের বই রুমীকে কাব্যচর্চা ও আধ্যাত্মিকতায় অনুপ্রাণিত করেছিল।
রুমীর তরুণ বয়সে চেঙ্গিস খানের আক্রমণের কারণে পরিবারসহ প্রথমে দামেস্ক ও পরে নিশাপুর আশ্রয় নেন। সেখানে রুমির সঙ্গে দেখা হয় ‘মানতিকে তাইয়ার’ গ্রন্থের রচিয়তা সাধক কবি ও শিক্ষক ফরিদউদ্দিন আত্তারের সঙ্গে। তিনি কিশোর রুমীর মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্ভাবনা দেখতে পান। তিনি রুমীকে ‘ইলাহিনামা’ (আল্লাহর গ্রন্থ) নামের একটা গ্রন্থ উপহার দেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর ১২৩১ সালে রুমীর বাবা ইন্তেকাল করেন। এ সময় রুমী তার বাবার মুরিদদের আত্মার বিকাশের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বিষয়, ধর্মতত্ত¡, কবিতা ও সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। বলা হয়ে থাকে এ সময় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দশ হাজার ছাত্রের সমাবেশ ঘটে। ১২৪৪ সালের ১৫ নভেম্বর রুমীর সাথে সাক্ষাত হয় তার আধ্যত্মিক পথ প্রদর্শক সুফি সাধক ও কবি শামস-ই-তাবরিজের। তাবরিজ তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। রুমীর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দিওয়ান-ই-শামস-ই-তাবরিজ’। রুমী তার জীবনের শেষ ১২ বছর ধরে তার বিখ্যাত কবিতার বই ‘মসনবী’ রচনা করেন। ২৭ হাজার লাইন বিশিষ্ট কবিতাটি ছয় খÐে বিভক্ত। এর কোথাও রয়েছে আত্মা-পরামাত্মার কথা, কোথাও বা রসিকতার ছলে কোরানের আয়াতের ব্যাখ্যা। তার সুফি সাধনার বিশিষ্টতা লক্ষ্যণীয়। তিনি খোদা প্রাপ্তিতে গান, কবিতা ও নৃত্যের ব্যবহার করেন। তিনি সামা গাইতে উৎসাহিত করেন। তার দ্বারা ঘূর্ণনমান নৃত্যের একটি ধারার ব্যাপক প্রসার লাভ করে।
‘মসনবী’ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বাংলায় এর কয়েকটি অনুবাদ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এমদাদিয়া লাইব্রেরিতে থেকে প্রকাশিত মাওলানা আবদুল মাজিদের অনুবাদ। ‘দিওয়ান-ই-শামস-তাবরিজ’ও বাংলায় পাওয়া যায়। এছাড়া রুমীকে নিয়ে রচিত কোলম্যান বার্কসের বই ‘দ্য সোল অব রুমী’ বাংলায় অনুদিত হয়েছে। সূত্র : ইন্টারনেট