মাংস নিয়ে ঝগড়ায় তালাক হওয়া বর-কনে বিয়ে করলেন পালিয়ে

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

চুয়াডাঙ্গায় বিয়ের আসরে খাবারের মাংস নিয়ে বাগ-বিতন্ডার জেরে যে দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, সেই বর-কনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আবার পালিয়ে নিজেরা বিয়ে করে নিয়েছেন। বর সবুজ আলী বলেন, সেখানে যা ঘটেছে, তাতে আমাদের দুইজনের তো কোন হাত নেই। বিয়ে বাড়িতে একদুই কথা হয়। কিন্তু সেটা যে এতদূর চলে যাবে, তা ভাবি নাই। এখন তারা উভয়েই ভালো আছেন বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, সুমি খাতুনের সঙ্গে সৌদি আরব প্রবাসী সবুজ আলীর বিয়ে হয় প্রায় দুই বছর আগে। সেই সময় তিনি সৌদি আরবে থাকলেও টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। গত রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বউ তুলে নিয়ে আসার কথা ছিল। সেই অনুষ্ঠানে গÐগোল হওয়ার কারণে তাদের তালাক হয়ে যায়। বিয়ের সময় তার সঙ্গে মোবাইল ফোন ছিল না। এ কারণে সেই সময় তিনি কারও সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে পারেন নি।
দুই বছর আগে বিয়ে হলেও চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দশমী গ্রামে গত রবিবার কনে সুমি খাতুনকে তুলে দেয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বরপক্ষের লোকজন মাংস বেশি খাওয়া নিয়ে কনেপক্ষের লোকজনের সাথে প্রথমে বাগবিতন্ডা এবং পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর সালিশ বৈঠকে বর-কনের মধ্যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।
কনের পিতা নজরুল ইসলাম জানান, বরপক্ষের লোকজন খাবারে অনেক মাংস নষ্ট করেছে। এরপরও ভাত না খেয়ে আরও বেশি মাংস চাইলে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ-বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এছাড়াও তারা গায়ে হলুদের উপহারও ফেরত নিয়ে এসেছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। সেদিন রাতেই দুই পক্ষের সালিশে বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘তিনজনকে নিয়েই এই গ্যাঞ্জামের সূত্রপাত। সবাই খেয়ে উঠে গেলেও বরের সাথে থাকা তিনজন বলতেছিল, আরও মাংস দাও। এটা বলে গ্যাঞ্জাম করে মারামারি শুরু করল।’
তবে বর সবুজ আলীর দাবি, মাংস নিয়ে না, হাত ধোয়া নিয়ে কথাবার্তার জের ধরে ঘটনাটা ঘটেছে। তারপর কী থেকে কী হয়ে গেল, বুঝলাম না। তার দাবি, যাদের কারণে ঝামেলা হয়েছে, তারা ঘনিষ্ঠ কোন স্বজন নন।
সবুজ আলী বলেন, সেই ঝামেলার পর যখন দুই পরিবারের মুরুব্বি, গ্রামের মাতবর মিলে বৈঠকে বসেন, সেই সময়েও তিনি চেয়েছেন যে, তার স্ত্রীকে তিনি বাড়িতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার শ্বশুর রাজি হননি। তবে সেদিন রাতে তিনিও ঘুমাতে পারেননি। ঝগড়ার সময় আমার কথা কেউ শোনেনি। আমি তখনও বলছিলাম, আমার বউকে আমি নিয়ে যাব। আমি বাড়িতে এসে রাগে বাসর ঘরের ফুল-টুল সব ছিঁড়ে ফেলছি। সারারাত ঘুমাতে পারি নাই, কান্নাকাটি করছি। পরের দিন সকালে মেঝ ভাবীর ফোনে আমার স্ত্রী ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করতে শুরু করে। সে বলে আমি থাকব না, আমি চলে আসব। পরে আমরা গেলাম। সন্ধ্যার সময় একটি মোটরসাইকেলে করে আমি সুমিকে নিয়ে কাজী অফিসে যাই। সেখানে বিয়ে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমি অনলাইনে, ফেসবুকে এরকম ঘটনার কথা শুনেছি, কিন্তু আমার জীবনেই যে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে, কখনো ভাবি নাই। এখন মেয়ের পক্ষেও সবাই ভালো আছে, আমরাও ভালো আছি। খবর বিবিসি বাংলা
বিদেশে থাকতেই মোবাইলের মাধ্যমে স্ত্রী সুমির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সবুজ আলীর মোবাইল দিয়েই কথা হয় কনে সুমি খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেদিন তার খুব খারাপ লাগছিল। সারারাত কান্নাকাটি করছিলেন। স্বজনরা তাকে বোঝাচ্ছিলেন যে, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছি। তার অভিমানও হয়েছিল, কিন্তু তিনি বারবার বলেছেন, আমি ওর (সবুজ আলী) কাছে যাব।
সুমি বলেন, ‘আমি সকালে হ্যালো কওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেও কানতে (কান্না করতে) শুরু করলো, আমিও কানতে শুরু করলাম। আমি কইলাম, আমি তোমার কাছে আজকেই চলে আসবো।’ সন্ধ্যায় এক কাপড়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসেন বলে জানান।
তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও পালিয়ে আসার পর থেকে তার বাবার সঙ্গে আর কোন কথা হয়নি বলে সুমি জানান।
কনে সুমির বাবা নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, সে চলে গেছে তার ভাগ্য নিয়ে, এখন আমি আর কি বলবো। সে বড়দের কথা শুনলো না। একদিক থেকে অবশ্য ভালোই হয়েছে। যার সাথে বিয়ে হয়েছিল, তার সাথেই আবার বিয়ে হইছে।