মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ‘বিব্রত’ রাঙামাটি পার্বত্য পরিষদ

12

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটিতে ৪৬২ জন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের আকস্মিক এক চিঠিতে বিব্রত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ১৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো এ চিঠিতে নিয়োগ কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠি পেয়ে লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২৩ সেপ্টেম্বর। পরীক্ষার যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই একটি চিঠির কারণে স্থগিত করা হয় পরীক্ষাটি। বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। নানা কৌতূহল জনমনে। এমনকি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে একের পর এক গুজব। যা নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন-১৯৮৯’এর ১৯ নং আইনের ৬৯ নং ধারা অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষকসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ২০০০ সালে একটি প্রবিধান প্রণয়ন করা হয়। যেটির আলোকে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চলতি সালের ২৯ মে জেলার ১০ উপজেলায় বিদ্যমান বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের ৪৬২টি শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি ২৩ সেপ্টেম্বর ধার্য ছিল।
বলবৎ বিধিমালায় বলা আছে, নিয়োগ ও বাছাই কমিটিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকবেন সভাপতি। সদস্য থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিষয়ভিত্তিক কমিটির আহবায়ক, পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দুইজন সদস্য। দুই সদস্যের মধ্যে একজন উপজাতি এবং একজন অ-উপজাতি, যারা চেয়ারম্যান কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। হস্তান্তরিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান থাকবেন সদস্য সচিব। এতে আরও উল্লেখ আছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে এ সংখ্যা ৩ এর অধিক হবে না। তার আলোকে জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি চেয়ে চিঠি পাঠালে ১৯ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সজল কান্তি বণিক চেয়ারম্যানকে নিয়োগ ও বাছাই কমিটিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি দেন। এ চিঠি পাওয়ার পরই জেলা পরিষদ পরীক্ষা স্থগিত করে।
এদিকে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিষদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের পদ মর্যাদায় পার্বত্য জেলা পরিষদে একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা রয়েছেন। তাছাড়া পরীক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আছেন। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি দেওয়া মানে পরিষদের নিজস্ব ক্ষমতার ওপর হস্তক্ষেপ করা। এটি জেলা পরিষদ মানতে পারছে না। মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে যদি পরিষদের নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে পরবর্তীতে জেলা পরিষদের নিজস্ব ক্ষমতা বলতে কিছুই থাকবে না।
জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, এটা জেলা প্রশাসকের দোষ নয়। এটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, পার্বত্যমন্ত্রী এ চিঠি সম্পর্কে জানেন না। তাছাড়া জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের সময় তো জেলা পরিষদের সদস্য রাখা, না রাখা নিয়ে কথা ওঠে না। কিন্তু জেলা পরিষদের বেলায় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রাখতে হবে কেন ? এটা যদি করা হয়, তাহলে জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের সময়ও জেলা পরিষদের প্রতিনিধি রাখা দরকার। শুধু পরিষদের নিয়োগের বেলায় এটি করা মানে জেলা পরিষদকে সন্দেহের চোখে দেখা।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, মূলত পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিষদের কর্মচারী চাকরি নিয়োগ প্রবিধানমালা-২০০০ -এর আলোকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল জেলা পরিষদ। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হয়। এটি প্রবিধানমালার বাইরে। নিয়োগ কমিটিতে ডিসির পদ মর্যাদায় পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন। এ ছাড়াও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থাকছেন। এমন অবস্থায় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধির প্রয়োজন থাকার কথা নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা পার্বত্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পরীক্ষার সময়সূচি ঠিক করব।
বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জেলা পরিষদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই। আর চিঠির কারণে যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে, তাও জানা নেই। নিয়োগ কমিটিতে জেলা পরিষদ জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নেবে কি, নেবে না- সেটা নির্ভর করবে জেলা পরিষদের ওপর। নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নানা কথা ওঠে। জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি থাকলে হয়তো অনেক কথা উঠবে না, তাও হতে পারে। চিঠির বিষয়টি নিয়ে আমি আমার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলব।