ভালো হয়নি এবার জুমের ফসল অনাবৃষ্টির কারণে

7

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

চলতি বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জুমের ফসল ভালো হয়নি। এতে বান্দরবানের সাতটি উপজেলার ১১টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সামনের বছর তাদের পরিবার কিভাবে চালাবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা। সন্তানদের লেখাপড়ার ও সংসার খরচ কিভাবে জোগাড় হবে তা নিয়েও চিন্তিত প্রায় প্রতিটি জুমিয়া পরিবার।
বান্দরবান সদর উপজেলার চিম্বুক এলাকার জুম চাষী সিংক্লান ¤্রাে ও থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে মেনলাও ¤্রাে জানান, মৌসুমী বৃষ্টি না হওয়ায় জুমের ধানসহ নানা জাতের ফসল মারা যায়। যার ফলে চলতি বছরের খাদ্যের জোগান কিভাবে হবে সেই চিন্তাই দিন পার করছে জুমিয়ারা। এবার ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে। ফলন যেমনই হক জুম খেতগুলোতে কোথাও ধান কাটা চলছে, কোথাও চলছে কাটার প্রস্তুতি। টিয়া, ঘুঘু, চড়ুই, ইঁদুর, বন্য শুকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণির হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পাহারা দিচ্ছেন জুম চাষিরা।
জুম চাষিরা জানান, পাহাড়ের আগাছা পরিষ্কার করে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ধান, কলা, মরিচ, আদা, বেগুন, শিম, মারফা, টিল, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করেছি। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ ভাদ্র মাসে জুমের ধান পাকতে শুরু করে। এবছর অনাবৃষ্টির কারণে জুমের ধান ভালো হয়নি।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, পাহাড়ের ৯৫ শতাংশ মানুষ জুম চাষে নির্ভরশীল। জুমের ধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন জুমিয়ারা।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, জেলার সাতটি উপজেলায় ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ হয়েছে। তবে জুমের ধান কাটা সম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারেনি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। থানচি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিশ্বজিত দাশ গুপ্ত বলেন, চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে জুমের ফলনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে পাহাড়ে ইঁদুর, বন্য শুকুরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণি জুমের ফসলের কিছুটা ক্ষতি করলেও ফসল রক্ষা করতে পাহারা দিচ্ছেন জুম চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এবছর জুন-জুলাই বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধান কম পরিপুষ্ট হয়েছে। এতে জুম চাষীদের মনে আশানুরূপ ফলন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই মুর্হূতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বলা যাচ্ছে না, কারণ অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফসল কাটা হবে। ফসল কাটা শেষ হলেই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে।