ভর্তিসংকট এড়াতে মানবিকে আসন বৃদ্ধি প্রয়োজন

17

 

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২১-২০২২ শিক্ষা বর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে আসন সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত অনেকে। সংবাদের শিরোনামে বলা হয়েছে সংকটের শঙ্কা নেই। একদিকে সংকটের চিন্তা অন্যদিকে শঙ্ক নেই বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষের আশ্বাস। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি কলেজসমূহে স্বভাবতই ভর্তির চাপ থাকে। এর মূল কারণ দু’টি। এক. গ্রামাঞ্চলের স্কুল হতে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা শহরের সরকারি বেসরকারি কলেজে ভর্তি চায়। তবে শহরের স্কুলগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি বেসরকারি কলেজের আসন পূর্ণ করতে সক্ষম। এমতাবস্থায় মফস্বল হতে পাস করা শিক্ষার্থীরা শহরের সরকারি বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য মরিয়া। ফলে দেখা যায় বর্তমান অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় শহরের সরকারি-বেসরকারি কলেজের সকল বিভাগের সকল আসন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। গ্রামাঞ্চল হতে অনেকে গ্রেট পয়েন্টের জোরে শহরের কলেজসমূহে ভর্তি তালিকায় স্থান করে নেয়। শহরের কলেজসমূহের কোন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় না। কলেজগুলো পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পেয়ে যায়। বোর্ড কর্তৃপক্ষ শহরের কলেজসমূহে আসন সংখ্যা পর্যাপ্ত বাড়িয়ে থাকে। বর্তমান ভর্তি প্রক্রিয়ায় মফস্বল তথা গ্রামের কলেজগুলোতে বর্তমানে যে পরিমাণ আসন সংখ্যা রয়েছে তা নিয়ে কলেজগুলো নানা সংকটের সম্মুখিন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ মফস্বলের কলেজসমূহে বিজ্ঞান বিভাগে যে পরিমাণ আসন বরাদ্দ দিয়েছে তার অধিকাংশ খালি পড়ে থাকে। এক সময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিল। অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ হতে পাস করে বিভাগ পরিবর্তন করে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে দেখা গেছে। কিন্তু বর্তমানের চিত্র ভিন্ন রকম। এইচএসসিতে বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সমানভাবে কমে গেছে। এমন অবস্থার মূল কারণ হলো, বিভাগ বড় কথা নয়, কোনভাবে এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট পেলেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার জন্য যে পরিমাণ মেধা এবং খাটুনি প্রয়োজন তা করতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নারাজ। পরিশ্রম না করে, যেনতেন প্রকারে এইচএসসি পাস করার পক্ষে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আগ্রহ। কেননা একসময় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পালিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আশ্রয় নিয়েছিল। বর্তমান সিলেবাসের প্রেক্ষাপটে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ইংরেজি এবং একাউন্টিং এর হাঙ্গামা ছাড়াও অতিরিক্ত আবশ্যক বিষয় হিসেবে আইসিটি যুক্ত হওয়ায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেও শিক্ষার্থীরা তিনটি কঠিন বিষয়ের মুখোমুখি না হয়ে এইচএসসি পাস করতে বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পালিয়ে মানবিক বিভাগের দিকে অধিক সংখ্যায় ঝুঁকে পড়েছে। এককথায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য পরিশ্রম করতে নারাজ। তারা শিক্ষা নয়, সার্টিফিকেট চায় সহজে। মানবিক বিভাগে ইংরেজি আইসিটি দু’টা বিষয় কোন রকম পাস করতে পারলে নির্বাচিত বিষয়গুলো সহজে পাস করা যাবে এমন চিন্তা হতে মানবিক বিভাগের প্রতি বর্তমানে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর আগ্রহ বেড়েছে। ফলে মফস্বল এলাকার কলেজগুলোতে মানবিক বিভাগে আসন সংকট বেড়েছে। অথচ মফস্বল এলাকার সত্তোর শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের আসন শূন্য থাকে। তাছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগেরও অনেক আসন শূন্য থাকতে দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞান বিভাগের আসন সংখ্যাপূর্ণ হয় শহর অঞ্চলের কলেজসমূহে। এক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সমতার ভিত্তিতে সব কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যবস্থা করতে পারছে না। অন্যদিকে মফস্বলের কলেজসমূহে মানবিক বিভাগে যত আসন রয়েছে তা নিয়ে কলেজগুলো অনেকখানি বিপাকে পড়ে আছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার ৯১.১২ শতাংশ। তৎমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগের। তার সাথে যুক্ত হবে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ। সুতরাং মফস্বল এলাকার বহু কলেজ মানবিকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে পারবে না। কলেজ টু কলেজ শিক্ষার্থীর সংখ্যায় সমতা আনয়নে বোর্ড কর্তৃপক্ষ মফস্বল এলাকার মানবিক বিভাগে আগেভাগে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। মফস্বল এলাকার কলেজগুলো হতে হয়তো বিজ্ঞান বিভাগ বাতিল করতে হবে নয় তো বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি বিষয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষের সর্বক্ষেত্রে সমতা আনয়নের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মনে করে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
দেশে পাসের হার বেড়েছে। সার্টিফিকেটধারী লোকের সংখ্যা বাড়ছে। দু:খজনক হলেও সত্য, প্রকৃত শিক্ষিত লোকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে হারে শিক্ষার্থী পাস করানোর লক্ষে বাংলা, ইংরেজি ভাষা শিক্ষাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয়, এক সময় দেখা যাবে শতকরা ৯৫ জন শিক্ষার্থী বিশুদ্ধ বাংলা ও ইংরেজি বাক্য লিখার যোগ্যতা ও অর্জন করতে পারবে না। আবশ্যক বিষয় বাদ দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে জাতিকে নিছক সার্টিফিকেটধারী করে তোলা হলেও শিক্ষা ও সার্টিফিকেটের মানকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। দেশের শিক্ষাকে সার্টিফিকেট নির্ভরতা হতে মুক্তি দেয়া না হলে এক পর্যায়ে জাতি সার্টিফিকেট ধারী মূর্খ জাতিতে রূপান্তরিত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে শিক্ষার সার্বিক সুফল- এমন মত শিক্ষা চিন্তকদের।