বেলাল-মাসুমের দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত লালখানবাজার

35

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর লালখানবাজারে কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের বিরোধ পুরানো। এই বিরোধের জের ধরে লালখানবাজারে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি সমাবেশও করেছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর লালখানবাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আবুল হাসনাত বেলালের হাতে। সম্প্রতি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ পেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বেলাল। এবার বেলাল-মাসুমের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
গতকাল শনিবার সকালে ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতারা কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত হয়ে ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতারা বেলালের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়ম, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া ও বাড়ি দখলের অভিযোগ আনেন। এই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে না থাকলেও দর্শক সারিতে সাংবাদিকদের সাথেই বসা ছিলেন কাউন্সিলর বেলালের প্রতিপক্ষ লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম।
লালখান বাজারের পরিস্থিতির বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বেলাল কাউন্সিলর হওয়ার পর তার অভ্যাসের পরিবর্তন হবে বলে ধারণা করেছিল আওয়ামী লীগ। যে কারণে নির্বাচনে তার পক্ষে আজকে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে সেই নেতারাই কাজ করেছেন। কিন্তু গত এক বছরের মাথায় তার বক্তব্য ও আচার-আচরণে আওয়ামী লীগ বিব্রত। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনই তার আপন। সে এলাকার সকল অনৈতিক কাজে সাপোর্ট দিচ্ছে। তার আচার-আচরণ গুন্ডার মতো। লালখানবাজারে সে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করুক। আমি আমার রাজনীতি করি, এমন হলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু সে এখন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে তাই ঝামেলা হচ্ছে।’
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলাল পূর্বদেশকে বলেন, ‘যে ইউনিটের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেসব কমিটি গঠনে অনিয়ম নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের রিভিউ কমিটিতে অভিযোগ আছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো ভিত্তিহীন। আওয়ামী লীগের প্রতি ইউনিটে ২১ জন করে নেতা থাকলেও তিন ইউনিটকে ৩০০টি টিসিবির কার্ড দিয়েছি। এরপরেও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলাটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই করছে। মাসুম চসিক নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে।’
এদিকে চসিক নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বেলাল ও মাসুমের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। কাউন্সিলর বেলাল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে অভিযোগ আছে। অন্যদিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলার আসামি। আবুল হাসনাত বেলাল শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দিদারুল আলম মাসুম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে গ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কান্তি দে বলেন, ‘কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর বেলাল এলাকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে শতশত দলীয় নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দিয়েছেন। টিসিবির কার্ড বিতরণ করেছেন নিজের পরিচিত জনদের। লালখানবাজারের অধিকাংশ দরিদ্র পরিবার এই কার্ডের আওতায় আসেনি। এ ওয়ার্ডটিকে কাউন্সিলর বেলাল মাদকের অভয়ারণ্য বানিয়েছেন। বেলালের লাগাম টেনে ধরতে আমরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও দেখা করবো।’
সূত্র জানায়, সপ্তাহজুড়ে লালখানবাজারের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়েছে। দুইজনের পুরানো বিরোধ আবারও মাথাচড়া দিয়ে ওঠেছে। গত ২৭ মার্চ ইস্পাহানি মোড়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় দিদারুল আলম মাসুম এলাকায় টিসিবির কার্ড বিতরণে কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনেন। এসময় সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। দুই নেতার সামনে মাসুম অভিযোগ তুলতেই তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান কাউন্সিলর বেলাল। একপর্যায়ে বেলাল ও মাসুম বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে বেলালের সমর্থকরা এলাকায় মিছিল বের করে মাসুমের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। সেই থেকে বেলাল ও মাসুমের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতার পুরানো দ্ব›েদ্ব যোগ দিয়ে মাসুমের পক্ষে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ইউনিট সম্মেলন অনিয়মের অভিযোগে মাঝপথে থমকে যায়। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যে ৯৭টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে তার মধ্যে লালখানবাজারের তিনটি ইউনিটও আছে। এই তিন ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রিভিউ কমিটিকে দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগের জের ধরেই ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতাদের একাট্টা করার সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন মাসুম।
লালখানবাজার ওয়ার্ডের গ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন মাসুম পূর্বদেশকে বলেন, আমরা মাসুমের সাথে নই, আওয়ামী লীগের সাথে আছি। উনি আমাদের ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। আমাদের ইউনিট কমিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অনুমোদন দিয়েছে। নতুন করে লালখানবাজারে গঠিত কোন ইউনিট কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই।