বিনাভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার পথে পেয়ারু

47

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাই আজ। বাছাই প্রক্রিয়ার আগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম অনেকটা নির্ভার থাকলেও বিপাকে আছেন বাকি দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত ও ফয়েজুল ইসলাম নিজেদের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। বাছাইয়ের আগেরদিন প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না দুই প্রার্থী। তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে হুমকি ধমকি দিয়ে অপহরণ করা হয়েছে। মনোনয়ন বাছাইকালে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ আনতেই এমন কৌশল নিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী।সূত্র জানায়, আজকে মনোনয়ন বাছাইকালে যদি প্রতিদ্ব›দ্বী কোন প্রার্থীর প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ উঠে তাহলে সেটি প্রমাণ করতে হবে প্রার্থীকেই। এক্ষেত্রে প্রার্থীকে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার সামনে হাজির হয়ে স্বীকারোক্তি দিতে হবে। তখন প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে উপস্থিত করতে না পারলে মনোনয়ন বাতিল হতে পারে। এমন অভিযোগে যদি চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত ও ফয়েজুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল হয় তাহলে বিনাভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের।
চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোন প্রার্থীর প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারী অপহরণ হওয়ার বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। সত্যি সত্যি কোন প্রার্থীর সমর্থন কিংবা প্রস্তাবকারী হয়ে স্বাক্ষর করার পর অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। বাছাইকালে তারা উপস্থিত না হলে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার বিষয়ে আইনে এভাবে বলা নেই। বাছাই প্রক্রিয়াটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়েই হবে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় ২৮ ধারায় উল্লেখ আছে, মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় কোন প্রার্থী কর্তৃক বাধা প্রদানে নিষেধ আছে। কিন্তু যাচাইবাছাইকালে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে উপস্থিত থাকতে হবে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। একই আইনের ৩০ ও ৩১ ধারায় উল্লেখ আছে, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী কর্তৃক বা তাহার পক্ষে অর্থ, অস্ত্র ও পেশীশক্তি কিংবা স্থানীয় ক্ষমতা দ্বারা নির্বাচন প্রভাবিত করা যাইবে না। কোন প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্যকোন ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে এই বিধিমালার কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
জানা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ণ রক্ষিত সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের দুই সদস্য আবু তাহেরকে প্রস্তাবকারী ও আবুল কালামকে সমর্থনকারী করেছিলেন। কিন্তু এই দুই ইউপি সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণ রক্ষিত। অপহরণের আগে দুই ইউপি সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি। একইভাবে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য শেখ নুরুল আলমকে প্রস্তাবকারী ও সংরক্ষিত সদস্য রিজিয়া সুলতানাকে সমর্থনকারী করেছেন। প্রস্তাবকারী ইউপি সদস্যের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়েজ। দুই প্রার্থী আশঙ্কা করছেন মনোনয়ন পত্র বাছাইকালে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ আনতেই তাদের প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে তুলে নেয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী নারায়ন রক্ষিত পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার প্রস্তাবকারী সমর্থনকারীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাদের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। তাদের মোবাইলও বন্ধ পাচ্ছি। কালকে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিলাম বলে জেনেছিলাম। সকাল ১১টার দিকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করেছি। এরা আমার কাছে পরাজিত হওয়ার ভয়ে আমার প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে অপহরণ করেছে। এভাবে করলে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।’
আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, অলরেডি আমার প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে খুব টর্চার করছে। তাদের তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। সমর্থনকারীকে হুমকি দিলেও কাবু করতে পারেনি। কিন্তু হুমকি ধমকিতে ভয় পেয়ে আমার প্রস্তাবকারী আমার ফোনও রিসিভ করছে না। আমি জানতে পেরেছে সে কালকে স্বাক্ষর করেনি বলে অনাস্থা দিবে। কিন্তু প্রস্তাবকারী স্বাক্ষর দিয়েছে ধলই ইউনিয়নের সেকান্দরপাড়া যুব কল্যাণ সমিতি কার্যালয়ে। যে সমিতির সাধারণ সম্পাদকও আমার প্রস্তাবকারী। অনেক লোকের সামনে তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। এ বিষয়ে থানায় কৌশলগত কারণে অভিযোগ দেননি বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, আজ মনোনয়নপত্র বাছাই, ১৯-২১ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র আপিল, আপিল নিষ্পত্তি ২২-২৪ সেপ্টেম্বর, ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দ এবং ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর। ১৫ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৭৩১ জন। পুরুষ ভোটার দুই হাজার ৯৪ জন ও মহিলা ভোটার ৬৩৭ জন। ভোটকেন্দ্র ১৫টি ও ভোটকক্ষ ৩০টি।