বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক

83

পূর্বদেশ ডেস্ক

অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক যিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নামেই পরিচিত। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য তিনি ছিলেন সুপরিচিতি। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন। তিনি আপোষহীন ন্যায়-নীতি, অসামান্য বাকপটুতা আর সাহসিকতার কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) নামে। ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এই মানুষটি। আদি পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায়। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতেই শুরু হয়। পরে তিনি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হন। গৃহ শিক্ষকদের কাছে তিনি আরবি, ফার্সি এবং বাংলা ভাষা শিক্ষালাভ করেন। ১৮৮১ সালে তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৮৮৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন এবং ১৮৮৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। ১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক পাস করেন। ১৯০০ সালে আইনজীবী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। ১৯০১ সালে যোগ দেন বরিশাল আদালতে। ১৯০৬ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯১১ সালে চাকরি ছেড়ে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯১২ সালে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯১৩ সালে ঢাকা থেকে প্রথম বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৫ সালে তিনি পুনঃনির্বাচিত হন। এই দুই মেয়াদে তিনি পরিষদে মোট ১৪৮ বার বক্তব্য দেন, যার মধ্যে ১২৮ বারই মুসলমানদের শিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন। ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ২১ বছর তিনি আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৩৫ সালে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি বেঙ্গল প্রদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৬২ এর ২৭ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তিনি প্রায় একমাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২৭ এপ্রিল ৮৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। ঢাকার পুরানো হাইকোর্টের পাশে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।