বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভারতীয় সেই জেলের

44

পাঁচদিন বঙ্গোপসাগরে ভেসে থাকার পর উদ্ধার হওয়া ভারতীয় জেলে রবীন্দ্রনাথ দাশকে নগরীর পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কোস্ট গার্ড কার্যালয়ে মেডিক্যাল চেকআপ শেষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় তাকে পতেঙ্গা থানায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপ নারায়ণপুরের বাসিন্দা। গত ৫ জুলাই সীমান্তবর্তী এলাকা কেদুয়া থেকে নৌকা নিয়ে তিনিসহ আরও ১৫জন মাছ শিকারে বের হন। পরদিন তাদের মাছ ধরার ট্রলারটি উল্টে গেলে তিনিসহ অন্যরা সাগরে ভাসতে থাকেন। এরপর গত ১০ জুলাই বেলা পৌনে ১টার দিকে শিল্পগ্রæপ কেএসআরএম-এর মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের এমভি জাওয়াদ নামের একটি মাছ ধরার জাহাজের নাবিকরা তাকে উদ্ধার করে। কেএসআরএম এর মিডিয়ার অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১০ জুলাই বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধারের পর আজ কোস্টগার্ডের মাধ্যমে তাকে পতেঙ্গা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
হস্তান্তরের আগে বিকাল ৪টার দিকে রবীন্দ্রনাথকে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি জেটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয়। সেখানে রবীন্দ্রনাথ সাগরে পাঁচদিন ভেসে থাকার বর্ণনা তুলে ধরেন। এসময় তিনি জীবন রক্ষার জন্য এমভি জাওয়াদ, কেএসআরএম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘গত ৫ জুলাই সীমান্তবর্তী এলাকা কেদুয়া থেকে নৌকা নিয়ে আমরা ১৫জন মাছ শিকারে বের হই। পরের দিন ৬ জুলাই উত্তাল স্রোতের ধাক্কায় উল্টে গিয়ে সাগরে ডুবে যাই। এরপর আমরা ১৫জন একটা বাঁশকে ধরে ২-৩ দিন একসঙ্গেই সাগরে ভাসতে থাকি। পরে একজন একজন করে আলাদা হয়ে তলিয়ে যেতে শুরু করি। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমি আর আমার ভাতিজা স্বপন দাশ (২২) ওই বাঁশ ধরে সাগরে ভাসছিলাম। ভাতিজাকে বাঁচাতে আমি আমার গায়ে থাকা লাইফ জ্যাকেট খুলে দিয়েও তাকে রক্ষা করতে পারিনি। এমভি জাওয়াদ আমাকে উদ্ধার করার ঘণ্টা তিনেক আগে বড় একটি ঢেউয়ে সে ভেসে যায়।’
তিনি বলেন, ‘যখন বৃষ্টি হতো, হা করে পান করতাম। বৃষ্টির পানি পান করেই বেঁচে ছিলাম। ঘুমাইনি। চোখ বন্ধ করলেই বাবা-মা, ছেলে-মেয়ের মুখটি ভেসে উঠছিল।’
সাংবাদিকদের সামনে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধারের বর্ণনা তুলে ধরেন এমভি জাওয়াদের ক্যাপ্টেন এস এম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তখন সকাল ১১টা। আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পাই, সে সাগরে ভাসছে। রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আমি হাই-কমান্ডকে জানাই। উনারা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যেকোনও মূল্যে তাকে উদ্ধার করার। এরপর আমাদের ক্রুরা খুব দক্ষতার সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধার করতে আমাদের জাহাজ পেছনে ঘুরাতে হয়েছে। এখানে টেকনিক্যাল অনেক টার্ম ছিল। মানবিকতার জায়গা থেকে আমরা আমাদের সবটুকু সমার্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি তাকে উদ্ধার করতে। তাকে উদ্ধার করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’