বজ্রপাতে প্রাণহানি এড়াতে জনসচেতনতা জরুরি

16

বর্তমানে কালবৈশাখীর মৌসুম চলছে। বসন্তের শেষ প্রান্তে এবং গ্রীষ্মকাল জুড়ে দেশে কালবৈশাখীর মৌসুম। এসময়ে ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রচুর বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। মেঘ হতে সৃষ্ট বজ্রপাত প্রাণ সংহারি। বজ্রপাতের ফলে গাছ-পালা সহ মানুষ মহিষ, গরু, ছাগলসহ নানা পশু-পাখির প্রাণহানি ঘটে থাকে। বজ্রপাত একটা প্রাকৃতির বিষয়। এর উপর মানুষ কিংবা বিজ্ঞানের কোন হাত নেই। বজ্রপাত প্রতিরোধক কোন প্রযুক্তি মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। মানুষ প্রকৃতির উপর সওয়ার হওয়ায় প্রকৃতি ও মানুষের উপর তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে।
আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে স্বাভাবিক প্রকৃতি তার স্বভাবে অবস্থান করতে পারছে না। এর মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক অন্যতম। বিশ্লেষকরা বলছেন দেশে ই-ফেল টাওয়ার বৃদ্ধি পাওয়া এবং দেশেপুরানো উঁচু গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে বজ্রপাত মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। উঁচু গাছ থাকলে বজ্রের প্রকোপ গাছ গ্রহণ করে নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষের প্রাণ বাঁচায়। অথচ দেশে অপরিকল্পিত এবং উন্নয়নের অজুহাতে বহু উঁচু গাছ কেটে দেশকে বিরাম ভূমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। যার কারণে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়েছে। তা ছাড়া বজ্রপাতের সময় মানুষের অসচেতনতা বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষ করে চৈত্র বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ঝড়-জঞ্জা, কালবৈশাখী এবং বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময়ে মাঠে ময়দানে কৃষক শ্রমিকেরা কাজ করে থাকে। সামান্য অসচেতনতার কারণে মাঠে ময়দানে কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যু বরণ করে। বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আকাশে মেঘ দেখার পর ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে শ্রমজীবী মানুষ মাঠ হতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলে বজ্রপাতে মৃত্যু এড়ানো যায়। বজ্রপাতের পরিবেশ হতে নিজেকে রক্ষার জন্য দেশের মানুষ নি¤েœাক্ত সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। (১) ঝড়-বৃষ্টির বজ্রপাতের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আলামত দেখা গেলে পুকুর জলাশয় হতে দ্রæত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। (২) বজ্রপাতের মৌসুমে রাবারের সেন্ডেল পরিধান করলে বজ্রপাত হতে কিছুটা নিরাপদ থাকা যায়। (৩) সব সময় উক্ত পরিবেশে পরিবাহী তথা বিদ্যুৎ যেসব বস্তুর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয় সেসব বস্তু হতে নিজ শরীরকে দূরে রাখতে হবে। গাছপালা, ধাতব বস্তুর পরিবেশ হতে নিজেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়াই উত্তম। (৪) অপেক্ষাকৃত নিচুস্থানে থাকা বাঞ্ছনীয়। (৫) বজ্রপাতের সময় দ্রæত নিজেকে উপযুক্ত পরিবেশে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব না হলে অবশ্যই কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু করে বসে যাওয়াই উত্তম। সোজা কথা হলো আকাশে মেঘ দেখা গেলে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বজ্রপাতের মৃত্যু হতে রক্ষা পেতে সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় বিগত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এবং কক্সবাজরের রামুতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাত জনিত কারণে। বিগত ২০২২ সালে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত বছর ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চ তিন শতাধিক মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে। এ বছর কালবৈশাখী মৌসুম তথা বজ্রপাতের মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে এপ্রিল মাসে প্রচুর কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের মানুষ বিশেষ করে যারা মাঠে ময়দানে কাজ করে তাদের বজ্রপাতের পরিবেশ হতে নিজেদের রক্ষায় সচেতন হওয়া জরুরি। আমরা সচেতন হলে বহু বজ্রপাতের অপমৃত্যু হতে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব।