ফের বেসামাল পাম অয়েলের বাজার

15

সবুর শুভ

পাম অয়েলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। করোনার উর্ধ্বগতির সময়ে লকডাউনের কারণে এমনিতেই মানুষ সংকটে আছে। তার উপর বাড়ল পাম অয়েলের দাম। এটা ভোক্তাদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা। গত দুই সপ্তাহে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৫৫০ টাকা। চাহিদা স্বাভাবিক থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দর বৃদ্ধির কারণে এখানেও এর প্রভাব পড়েছে। দেশীয় বাজারে ট্রেড বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে জানান ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন- আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে পাম অয়েলের দাম উর্ধ্বমুখী। তাই দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দামের এ অবস্থা। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে উর্ধ্বমুখীতার কারণে দেশীয় বাজারে পাম অয়েল ট্রেড হচ্ছে অনেক বেশি। সে হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও লোকাল ট্রেডের কারণে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সামনের দিকগুলোতে কি হয় তা বলতে চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের দোকানগুলোতে গত মঙ্গলবার প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে ৩ হাজার ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে সাড়ে পাঁচশ টাকা বেড়েছে পাম অয়েলের দাম। করোনার কারণে যখন মানুষ আয়-রোজগারহীন হয়ে পড়েছে তখন এ ধরনের দাম বৃদ্ধি জনজীবনকে আরও বিষিয়ে তুলবে বললেন স্বপন নামে ডিসি রোড এলাকার এক খুচরা দোকানি।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে এস আলম ৪২৯০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪৩০০ টাকা, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পাম অয়েলের পাশাপাশি মণে প্রায় দেড়শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম সুপার অয়েল ও সয়াবিনের দামও। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা দরে। ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে পাম সুপার অয়েল মণ ৪ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতিমণ বে ফিশিং ৪৫৫০ টাকা, এস আলম ৪৫৪০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রæপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দরে। যা গত দুই সপ্তাহ আগে ৪ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, গত দুই সপ্তাহে সয়াবিনের দামও মণে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী (মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশীয় বাজারে গত মাসে পাম অয়েলের দাম মণে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় দেশীয় বাজারে আবারো পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যটির লোকাল ট্রেড শুরু করেছে। এতে একহাত থেকে অন্যহাতে ঘুরে দাম অস্থির হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহার বক্তব্য হচ্ছে, খোলা পাম অয়েল এবং সয়াবিনের দাম উঠানামা আন্তর্জাতিক বাজার এবং লোকাল ট্রেডের উপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে লোকাল মার্কেটও চাঙা হয়েছে। তবে আমরা সরকার নির্ধারিত দামে বোতলজাত তেল বিক্রি করছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।
ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য বলছে, ৩০ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১০১৭ ডলারে। বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৯৯০ ডলারে। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে ১০১৯ ডলার, মার্চে ১০৩০ ডলার, এপ্রিলে ১০৭৮ ডলার এবং মে-তে সর্বোচ্চ ১১৫৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে। খরচসহ বর্তমানে প্রতিমণ পাম অয়েলের বুকিং দর ৩৯৪৪ টাকা। যা ৪৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।