ফের অস্থির পেঁয়াজ ও এলাচের বাজার

209

সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতিকেজি ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। গত বুধবার বিকেলে কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও গতকাল আবার কমে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমে আসে। চীনা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও ১০ টাকা বেড়ে কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আড়তদাররা বলছেন, গত সপ্তাহে ক্রেতা না থাকায় দাম একটু কম ছিল। তবে অন্যান্যদিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম ছিল নিম্নমুখী।
অন্যদিকে এলাচির বাজারেও একই অবস্থা। নভেম্বরের শুরু থেকে খাতুনগঞ্জের একটি সিন্ডিকেট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বলে অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তারা জানান, কয়েকদিনের ব্যবধানে তারা কেজিতে হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, কেউ যদি জোর করে দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে অ্যাকশনে যাবো। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক সেটি আমরা চাই না।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ থেকে ৮ ট্রাকের মত পেঁয়াজ ঢুকেছে। তারমধ্যে ৯০ টন মিয়ানমারের পেঁয়াজ, বাকি ৫০ টনের মত চীনের।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, গত সপ্তাহের শেষের দিকে একটু কমদামে পেঁয়াজ ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকলেও ক্রেতা ছিল না। তাই ৭০ থেকে ৮০ টাকা প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু এ সপ্তাহে ১৩০ টাকা পর্যন্ত পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়। তা বর্তমানে আবার কমে আসছে। তবে চীনের পেঁয়াজ আগের মতই রয়েছে। ওটা কম চলে বিধায় দামের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এলাচির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অক্টোবরের শুরুতে কেজি দুই হাজার ১৫০ টাকা থাকলেও নভেম্বরের মাঝামাঝিতে মসলাটির দাম তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। যদিও শুল্কসহ প্রকৃত আমদানি মূল্য কেজি ৮৫৭ টাকা ৫০ পয়সা।
জানা গেছে, সারা দেশের মসলার বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় ডিও (স্লিপ/টোকেন) ব্যবসার মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করছে একটি অবৈধ সিন্ডিকেট।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুবাই ও ভারতে এলাচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গুয়েতেমালা থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশ এলাচ আমদানি করে। কিন্তু বর্তমানে গুয়েতেমালা বাংলাদেশে এলাচ রপ্তানি করছেন না। কারণ ওখানে উৎপাদন সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তারা বাংলাদেশের জন্য কোন প্রাইজ নির্ধারণও করছেন না। সুতরাং বাজারে এলাচের সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গতকাল পাইকারিতে প্রতিকেজি এলাচি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
জানা যায়, সারাদেশে ২৪ আমদানিকারক ৮৩ চালানের মাধ্যমে এই এলাচ আমদানি করে। এর মধ্যে দু-তিনজন ছাড়া বাকি সবাই খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক।
খাতুনগঞ্জের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েকজন আমদানিকারক ও কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী মিলে ১০-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট এলাচের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ডিও ব্যবসার মাধ্যমে বাজারে দাম বৃদ্ধি করছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলাইমান বাদশা বলেন, ‘স্লিপ/ডিও বিক্রি একটি অবৈধ ব্যবসা। স্লিপ বিক্রির নামে জুয়া অহরহ চলে এ খাতুনগঞ্জে। আর এই ব্যবসায় গত ২০ বছরে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়েছেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ ব্যবসায়ীদের চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই দুষ্টচক্রের হোতাদের আইনের আওতায় এনে আসল ব্যবসায়ীদের সহজভাবে ব্যবসা করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া।’
ডিও ব্যবসার কারণে এলাচির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দাবি করে বাংলাদেশ হোলসেলার স্পাইসি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি অমর কান্তি দাস পূর্বদেশকে বলেন, ডিও/স্লিপ ব্যবসার কারণে এলাচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় মাস আগেও এলাচের বাজারে ডিও ব্যবসা ছিল না। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনাদের। আর ভারতে আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার টাকারও বেশি। অনেকে আবার বাংলাদেশ থেকে কিনে নিয়ে গিয়ে ওখানেও বিক্রি করতে পারেন, আবার ওখানে (ভারতে) দাম কমলে, ওখান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে বিক্রি করে কিছু ব্যবসায়ী। তবে বর্তমানে গুয়েতেমালা থেকে এলাচ আনা সম্ভব হচ্ছে না, ওখানে উৎপাদন বন্ধ বিধায় অক্টোবর থেকে আমদানিও বন্ধ। আমিও অত প্যাচাল মাথায় নিতে পারবো না, আগামী মার্চ মাস থেকে এলাচ বিক্রিও বন্ধ করে দিবো।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে জানান, খাতুনগঞ্জে মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণেও সিন্ডিকেট করতে পারে সেটি অস্বাভাবিক নয়। আমরা সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং এ আছি। যদি কোনো ব্যবসায়ী বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম বেড়ে যায়, দেশের বাজারে প্রভাব পড়বে তা স্বাভাবিক। তবে কেউ যদি জোর করে দাম বাড়িয়ে দেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবো। বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক সেটি আমরা চাই না।