প্রার্থনা হোক জাতির কল্যাণ কামনায়

10

আজ পবিত্র শবে বরাত। ইসলামের ইতিহাসে সৌভাগ্যের রজনি হিসাবে সমধিক পরিচিত। হাদিসের বর্ণনা অনুসারে রাতটিকে নিস্ফে শাবান বলা হয়। যা মুসলমানদের কাছে ১৪ শাবান দিবাগত রাত হিসেবে বিবেচ্য। এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অত্যন্ত বরকতময় ও মহিমান্বিত রজনি হিসেবে বিশেষ ইবাদত ও প্রার্থনার মধ্যে অতিবাহিত করে থাকেন। ইসলামি পÐিতদের মতে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির জন্য তাঁর অসীম রহমতের দরজা খুলে দেন এ রাতে। শাবানের পরই সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান আসে, মানবজাতির জীবনের সব পাপ পঙ্খিলতা দূর করার ফজিলত নিয়ে। লায়লাতুল বরাত বা শবে বরাত রমজানের ইবাদতের প্রস্তুতির এক প্রকার অনুশীলনই বলা যায়।
এ দিনটি প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের জানান দিয়ে যায় দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা। এ রাতে মানবসমাজ তথা বিশ্বের সব সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেন আল্লাহ তায়ালা। তাই এটিকে বরাত তথা সৌভাগ্যের রজনী বলা হয়। মহান রাব্বুলালামিন এ রাতে তাঁর বান্দাদের জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণ এবং রুজি-রোজগার বণ্টন করেন। বর্ষণ করেন, বান্দার প্রতি অশেষ দয়া ও করুণা। তাই বান্দারা এ দিন রাত জেগে নফল ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, জিকির-আযকার ইত্যাদির মধ্যেই কাটান। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বান্দারা যখন পাপের ক্ষমা চায়, আগামীর সুন্দর ভবিষ্যত প্রার্থনা করে তখন মহান প্রভু তাদের আকুতি, আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে সৌভাগ্যবান করে দেন এ রাতে। এ কারণেই মুসলমানদের কাছে শবে বরাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কুরআনের সুরা দুখানে বলা হয়েছে, ‘শপথ এই সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি এই কিতাবকে বরকতময় রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাত্রিতে ফয়সালা করা হয় প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়, আমার পক্ষ থেকে নির্দেশক্রমে, নিশ্চয় আমি প্রেরণাকারী।’ পবিত্র কুরআনের এই সুরার ব্যাখ্যায় মুফাসসেরিনে কেরাম শবে বরাতকে নির্দেশ করেছেন বলে বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, কেন শবে বরাত মুসলমানদের কাছে এত মহিমাময়। সেই মহিমার রোশনাই জীবনে ও কর্মে অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে প্রয়োগের জন্যই প্রত্যেক মুসলমান এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে কাটান। গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয় খাদ্যসামগ্রী। ধনীদের সম্পদের ওপর যে গরিবের হক রয়েছে, তা বারবার উচ্চারিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে। এই পবিত্র রাতে আমরা যেন ভুলে না যাই, নিকটাত্মীয় গরিব ও প্রতিবেশীর কথা। তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া মৃত মা বাবাকে স্মরণ করা এবং তাদের কবর যিয়ারতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এ রাতে। রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এ রাতে পবিত্র জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার কথা জানা যায়। শবে বরাতের জন্য এ বর্ণিত হাদিসটি অকাট্য দলিলও বটে। আমরা বিশ্বাস করি, ইসলাম মানবতার ধর্ম। শান্তি, সাম্য ও সৌহার্দ্য ইসলামের মূল কথা। ইসলামের শান্তি ও সম্প্রীতির শাশ্বত বাণীর প্রতিফলন ঘটাতে হবে আমাদের চিন্তা ও কর্মে। ইসলামের শিক্ষা থেকে কখনোই যাতে আমরা বিচ্যুত না হই, সে ব্যাপারেও সদা সজাগ থাকতে হবে। আজকের সৌভাগ্য আর রিজিক বরাদ্দের, জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণের রজনিতে আমরা সব রকম গোঁড়ামি, অন্যায় ও অপকর্ম থেকে পরিত্রাণ লাভের প্রার্থনা করব মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে। এই রাত সমগ্র জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনুক, এটাই সর্বান্তকরণে প্রত্যাশা করি। পবিত্র এই রজনির আলোকচ্ছটায় আমাদের অন্তর হোক উদ্ভাসিত, দূর হোক কালিমা, সমৃদ্ধি আসুক সবার ঘরে ঘরে-এটাই প্রার্থনা।