প্রবারণা পূর্ণিমা ফানুসের আলোয় রঙিন আকাশ

30

একের পর এক আগুনমুখো ফানুস উড়ে যাচ্ছে আকাশে। বর্ণিল কাগজে তৈরি বিচিত্র আকারের ফানুস। এর মধ্যে নজর কাড়ছিল ব্যতিক্রমী কিছু ফানুস। কোনোটিতে আঁকা ধর্মীয় চিহ্ন। কোনোটিতে লেখা শান্তির বাণী। একটি ফানুসে ছিল ‘কোভিড-১৯’।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের ডিসি হিলসংলগ্ন চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দিরে প্রবারণা উৎসবের দৃশ্য এটি। শুধু চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দির নয় রাউজান, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়াসহ প্রায় সব উপজেলার বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে উদযাপিত হয়েছে প্রবারণা উৎসব। ফানুসের আলোয় রঙিন হয়ে যায় সন্ধ্যার আকাশ।
গল্পকার বিপুল বড়ুয়া বলেন, আড়াই হাজার বছর আগে এক রাতে জগৎ-সংসারের মায়া ছেড়ে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ বেরিয়েছিলেন মোক্ষপ্রাপ্তির আশায়। একে একে সব রাজকীয় পোশাক ছেড়ে সিদ্ধার্থ নিজের তরবারি দিয়ে মাথার চুল কেটে এ সত্যক্রিয়া অধিষ্ঠান করলেন, ‘আমি যে উদ্দেশ্যে সংসারধর্ম ত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করেছি তা যদি পূর্ণ হয় তবে আমার চুলগুচ্ছ নিচে এসে না পড়ে ঊর্ধ্বে আকাশে উড়ে যাবে…’। তাঁর চুলগুচ্ছ নিচে না পড়ে সত্যিই ঊর্ধ্বে উত্থিত হয়েছিল। এই সত্যক্রিয়ার আবহে বৌদ্ধরা ভক্তিচিত্তে ফানুস ওড়ায়।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি যুব’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বড়ুয়া জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে প্রবারণা উৎসবের কর্মসূচি উদযাপিত হয়েছে। সকালে বুদ্ধপূজা, শিবলী পূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ, কর্মদেশনা, ধ্যান অনুশীলন, প্রার্থনা, সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন ও ফানুস উড়ানো হয়েছে। পৌরহিত্য করেন ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের।
তিনি জানান, ফানুস উৎসবের উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান। তিনি উপস্থিত সবার মধ্যে করোনা সচেতনতার জন্য এক হাজার মাস্ক বিতরণ করেছেন।
বাঁশখালী বৌদ্ধ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকাশ বড়ুয়া জানান, বাঁশখালীর ৯টি বৌদ্ধমন্দিরে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবারণা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। এর মধ্যে জলদীর একটি বৌদ্ধমন্দিরে অষ্টবিংশতি বুদ্ধপূজা সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করেছে। খবর বাংলানিউজের
এদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন সকালে নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার ও কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় তিনি বলেন, প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য আত্মশুদ্ধি, শুভ, সত্য ও সুন্দরকে বরণ করে অসত্য ও অসুন্দরকে বর্জন করা। আমি কামনা করি মানুষের অন্তর থেকে সব মলিনতা দূর করে অহিংসা, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম ও দয়া জাগ্রত হোক।