প্রথম রাউন্ডে উতরে গেল বাংলাদেশ

12

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সমীকরণ অনুযায়ী মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে জিতলেই নিশ্চিত হতো মূল পর্ব বা সুপার টুয়েলভ-এ খেলা। সেখানে পাপুয়া নিউগিনিকে ৯৭ রানে অলআউট করে ৮৪ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জয় তুলে নেয় টাইগাররা। এর আগে প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কা জাগে। তবে পরের দুই ম্যাচে সে শঙ্কা ছুড়ে ফেলে গ্রæপ ‘বি’ থেকে সবার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দল। ১৮২ রানে লক্ষ্যে খেলতে নেমে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রা ভূমিকম্পের প্রকোপই যেন টের পেল পাপুয়া নিউ গিনি (পিএনজি)। পিএনজির এই ধ্বংসযজ্ঞের শুরুটা হয় সাইফউদ্দিনের হাত ধরে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১১ রানে এই অলরাউন্ডার ফেরান লেগা সিয়াকাকে (৫)।
পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে পিএনজি অধিনায়ক আসাদ ভালাকে (৬) উইকেটরক্ষক সোহানের ক্যাচ বানান তাসকিন। পঞ্চম ওভারে চার্লস আমিনি (১), সিমন আতাইকে (০) তুলে নেন সাকিব। নবম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ২৪ রানে সেসে বাউকে (৭) নিজের তৃতীয় শিকার বানান সাকিব। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে নরম্যান ভানুয়াকে (০) মুশিফিকের ক্যাচ বানান মাহেদী হাসান। দশম ওভারে পিএনজির সপ্তম উইকেট হিরি হিরিকে যখন সাকিব তুলে নেন তখন দলীয় রান ২৯। এরপর অষ্টম উইকেট জুটিতে চাদ সোপার ও কিলপিন ডরিগা স্কোরবোর্ডে কিছু রান যোগ করলেও তা দলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ১৯.৩ ওভারে তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ৯৭ রানে। এতে ৮৪ রানের রেকর্ডগড়া জয় পায় বাংলাদেশ। ৩৪ বলে ডোরিগা থামেন ৪৬ রানে। টাইগারদের হয়ে সাকিব আল হাসান সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন। দুইটি করে উইকেট নেন সাইফউদ্দিন ও তাসকিন। মাহেদি হাসান নেন একটি উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার যায় সাকিবের পকেটে।
এর আগে মাসকাটের আল আমেরাত স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আগের ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে অর্ধশতকের স্বাদ পাওয়া নাঈম শেখ গতকাল ইনিংসের দ্বিতীয় বলে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরমুখী হন। এরপর সাকিব ও লিটন দ্বিতীয় উইকেটে দলকে টেনে তোলার চেষ্টায় গড়েন ৫০ রানের পার্টনারশিপ। কিন্তু ইনিংসের অষ্টম ওভারে দলীয় ৫০ রানের মাথায় আসাদ ভালার প্রথম বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২৩ বলে ২৯ রান করে ফেরেন লিটন।
এদিন একপ্রান্ত আগলে রেখে সাকিব রানের গতি সচল রাখলেও অন্যপ্রান্তে আবারও ব্যর্থ হন মিস্টার ডিফেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। দলীয় ৭২ রানে সাইমন আতাইকে উইকেট দিয়ে বিদায় নেন ৫ রান করে। মুশি বিদায় নিলে সাকিবের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ। দুজনের দারুণ সমীকরণে এগিয়ে যাচ্ছিল দলীয় ইনিংস। পূর্ণ হয় দলীয় শতক। সাকিব ছুটছিলেন হাফসেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ১৪তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১০১ রানে আসাদ ভালাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে চার্লস আমিনির হাতে ধরে পড়ে ৪৬ রানের আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
তবে সঙ্গী হারালেও শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা মাহমুদউল্লাহ আরও চড়াও হয়ে উঠেন পিএনজির বোলারদের ওপর। তার চার-ছক্কার বৃষ্টিতে দ্রæত ১৫০’র দিকে যেতে থাকে বাংলাদেশ। ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন বাংলাদেশের এই অধিনায়ক।
তবে এরপরই এক প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। ডেমিয়েন রাভুর ফুল টস বল তার কোমর ছুঁই ছুঁই করছিল কিন্তু ফিল্ডার ক্যাচ লুফে নেয়ায় অপেক্ষা ছিল থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের। শুরুতে স্ক্রিনে নট আউট দেখালেও কয়েক সেকন্ড পরই তা আউট উঠে আসে। ২৮ বলে ৫০ রানে ফেরেন তিনি। পরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন নুরুল হাসান সোহান। ১৮ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ১৫৩ রান। তবে সেই ওভারে বাউন্ডারি হাঁকালেও শেষ বলে আউট হন আফিফ। ১৪ বলে ২১ রান করেন তিনি।
শেষ ওভারে সাইফউদ্দিন এবং শেখ মাহেদি মিলে যোগ করেন আরও ২০ রান। শেষ দুই বলে জোড়া ছক্কা হাঁকান সাইফউদ্দিন। সঙ্গে ফ্রি হিটে নেন বাউন্ডারি সহ ৫ রান। বাংলাদেশ পায় ১৮১ রানের পুঁজি। ৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন সাইফউদ্দিন। পিএনজির তিন বোলার কাবুয়া মোরেয়া, দামিয়েন রাভু ও আসাদ ভালা নেন দুটি করে উইকেট।