পি কে হালদারকে ফেরানোর বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

‘হাজার কোটি টাকা পাচার করে’ পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ধরা পড়া পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার কী কী উপায় আছে, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ‘প্রয়োজনে’ একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়। খবর বিডিনিউজের
দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের জানান, কমিশনের অনুরোধে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সভা হয়। পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনা এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশের যে টাকা ভারতে চলে গেছে তা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এবং বাংলাদেশে ইন্টারপোল অথরিটিকে আইনি কার্যকরী, ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা পরশু (মঙ্গলবার) অনুরোধ জানাই। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে এ সভা ডাকে জানিয়ে দুদক কর্মকর্তা মাহবুব খান বলেন, মিটিংয়ে আসামি প্রত্যর্পণ আইনসহ সমস্ত আইন-বিধির যে সমস্ত বিধান আছে, এগুলো ব্যবহার করে কীভাবে তাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে পারি, সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়।
পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ ব্যবহারের বিষয়েও সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের যে সমস্ত প্রমাণ প্রদর্শনের দরকার আছে, সেগুলো সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে কাজ সহসায় আমরা শেষ করব। কূটনৈতিক ও অন্যান্য চ্যানেল ব্যবহার করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার আশা প্রকাশ করে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, দুদক একা নয়, সংশ্লিষ্ট সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে আমরা সফলকাম হব।
পি কে হালদার এবং ভারতে তার পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রয়োজনে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে ভারত সফরের বিষয়েও সভায় আলোচনা হয়, তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণ করে তারা তথ্য সংগ্রহ করবে। তবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা বলেন, যদি কমিটি করা হয়, তাতে দুদকের প্রতিনিধি তো থাকবেই। দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে পি কে হালদারের মানিলন্ডারিং নিয়ে মামলা করেছে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানে মামলা নেই। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে এটি প্রথম সভা হলেও শিগগিরই আরও সভা করা হবে বলে জানান তিনি।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও আইন, পররাষ্ট্র, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ভারতে পি কে হালদারের পাচার করা অর্থের সঠিক পরিমাণ জানতে দেশটি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে দুদক বিএফআইইউকে চিঠি দিয়েছে বলে জানান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব।
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের অন্যান্য প্রদেশে পি কে হালদারের সম্পত্তি আছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রচার হচ্ছে উল্লেখ করে দুদক কর্মকর্তা বলেন, এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য বিএফআইইউকে তথ্য সংগ্রহের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পি কে হালদারের সম্পত্তির খোঁজ জানতে এবং গ্রেপ্তারে দুদক থেকে ভারতকে আহŸান জানানো হয়েছিল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুদকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে পি কে হালদারের ব্যাপারে সম্পদের মামলা করে চার্জশিট দিয়েছে। তার ও অন্যদের বিরুদ্ধে আরও ৩৫টি মামলা করেছে। অল্পদিনের মধ্যেই এগুলোর চার্জশিটও হবে।
এদিকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত এ মামলা করেন।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে এর আগে ৩৪টি মামলা হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের করা নতুন মামলাটি নিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫।
মামলায় পি কে হালদারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে অবৈধ উপায়ে ভুয়া ও ‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ দিয়া শিপিং লিমিটেডের নামে ঋণ হিসেবে নিয়ে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
পি কে হালদার ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দিয়া শিপিং লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান এম এ হাফিজ, সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অরুণ কুমার কুন্ডূ, অঞ্জন কুমার রায়, মো. মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহরিয়ারকেও আসামি করা হয়েছে।