পি কে হালদারকে ফেরাতে সব চেষ্টা চলছে : দুদক

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতে কিছু মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডও চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশনে সকালে আমরা নিজেরা বসেছি এবং পরবর্তী কর্মকান্ড কী হবে, কমিশন থেকে এ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’।
তাকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, ‘ইন্টারপোল খুব দ্রæত রি-অ্যাক্ট করেছে, তারা দ্রæতই আমাদের অনুরোধে প্রেক্ষিতে ভারতীয় ইন্টারপোল বডির সাথে যোগাযোগ করে আসামিকে ফেরত আনার পদক্ষেপ নিয়েছে’।
গুঞ্জন ছিল, পি কে হালদার কানাডায় গিয়ে ফেরারি জীবন যাপন করছেন। কিন্তু গত শুক্রবার হঠাৎ করেই খবর আসে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযানে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরদিন তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান দুদক মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব।
তিনি বলেন, ‘আমরা হোম মিনিস্ট্রিতে চিঠি লিখব, এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যত দ্রæত সম্ভব আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যায়। আপনারা জানেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে। ভারতে যে সম্পত্তির খবর পাচ্ছি, তার কিছু কিছু খবর আমরা আগে জানতাম। আরও কিছু খবর আমরা জানছি। এর ইনডিটেইলস জানার জন্য আমাদের বাংলাদেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে অনুরোধ জানাব যে, এই সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করার জন্য’।
এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির আদালতের সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে জানান দুদকের এই কর্মকর্তা। সেসব তথ্য নিয়ে নতুন করে সাপলিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে পরিবর্তীতে পদক্ষেপ নেব’।
অর্থ পাচার ও আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক ৩৪টি মামলা করেছে জানিয়ে সাঈদ জানান, এসব মামলার মধ্যে কয়েকটির অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। আরও কিছু নতুন মামলাও করা হবে।
ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে কত সময় লাগতে পারে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভারতে যেহেতু তারা বেশকিছু মামলা করেছেন, হয়ত আরও মামলা করবেন। দুই-একটা মামলায় রিমান্ডেও নিয়েছেন। এখন আমাদের দিক থেকে প্রেসার ও চেষ্টা থাকবে যে, যত দ্রæত তাকে আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারি। সেজন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে’।
তবে ভারত যদি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচার সেই দেশে সম্পন্ন করতে চায় তাহলে তাকে ফেরাতে সময় লাগতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা। সেখান থেকে কতদিনের মধ্যে ফেরত আনা যায়, সেটা স্পেসিফিক বলা কঠিন। সেখানে মামলা বা এর বিচার কতদিন লাগবে। অথবা বিচারের আগেও ফেরত আনা যাবে কি যাবে না, এই বিভিন্ন বিষয়ের কারণে সময়ের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না’।
পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের পেছনে যদি আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না, এ প্রশ্নের উত্তরে দুদকের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের ব্যাপারে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাই, অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব’। খবর বিডিনিউজের
পি কে হালদারের বিষয়ে জানতে ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি : বাংলাদেশ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ।
ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো- এনসিবি কর্মকর্তারা জানান, গত রবিবার ভারতের এনসিবিকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়।
ভারতসহ দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গত শনিবার খবর আসে বিপুল অর্থ আত্মসাতের পর পালিয়ে থাকা এনআরবি গেøাবাল ব্যাংকের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট- ইডি গ্রেপ্তার করেছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, সরকারিভাবে তাদের কাছে কোনো তথ্য নই। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন।
তবে ভারতের তদন্ত সংস্থা ইডি এর আগে পি কে হালদারের সম্পদের খোঁজে অভিযানের খবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানালেও গ্রেপ্তারের কোনো খবরের তারা বিজ্ঞপ্তি দেয়নি।
এদিকে পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশের পরদিন রবিবার বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটি থাকলেও অফিস করেছেন ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা এনসিবির কর্মকর্তারা। এই শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম গতকাল সোমবার সকালে জানান, পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবর ভারত থেকে সমর্থিত বা অসমর্থিত ‘কোনোভাবেই’ জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘এজন্য এনসিবি বাংলাদেশ নিজ উদ্যোগে এ বিষয়ে জানতে রবিবারই ভারতের এনসিবিকে চিঠি দিয়েছে। আমরা পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবরের কথা উল্লেখ করে তার বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভারতের এনসিবিকে চিঠি দিয়েছি। এখন পর্যন্ত চিঠির কোনো জবাব পাইনি। তাদের অনুষ্ঠানিক চিঠির অপেক্ষায় আছি’।
এর আগে পি কে হালদার কানাডায় আছেন এমন খবর পাওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘সে সময় কানাডাকেও চিঠি দেওয়া হয় কিন্তু কোনো জবাব মেলেনি’।
পি কে হালদারের বিষয়ে এনসিবি খোঁজ রাখছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু এনসিবি নয় এই বিষয়ে সরকারে বিভিন্ন সংস্থা- মন্ত্রণালয় ওই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সাথেও কাজ করছে’।
পি কে হালদার আওয়ামী লীগের কেউ নন : পি কে হালদার আওয়ামী লীগের কেউ নন জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তবু তিনি অর্থপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত। তার বিচার প্রক্রিয়া আইনের মাধ্যমে হবে’।
গতকাল সোমবার একটি দলীয় সভায় ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের স্থান কোনোভাবেই দলে হবে না। ভালো লোক ও ত্যাগীদের দলে মূল্যায়ন করতে হবে’। পকেট ভারী করার জন্য খারাপ লোকদের দলে না টানতে নেতাদের প্রতি আহব্বান জানান তিনি।
অর্থপাচারকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের নামের তালিকা প্রচার করতে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে বলেন, ‘অর্থপাচারকারীর নামের তালিকা যদি প্রচার করতেই হয়, তাহলে সবার আগে আপনাদের দলের দন্ডিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম চলে আসবে’।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে কথা বলার আহব্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বাড়াবাড়ি করবেন না। বেশি বাড়াবাড়ি ভালো নয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন’।