‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে আ. লীগ সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে

10

ঢাকা প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ বিএনপির কর্মসূচির দিন ‘পাল্টা কর্মসূচি’ দিয়ে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আওয়ামী লীগকে বিএনপির কর্মসূচির দিন ‘পাল্টা কর্মসূচি’ না দেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সব দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে। গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সেটি তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ‘সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যে’ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তাদের নেতৃবৃন্দের উসকানিমূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া, জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে। এ কারণেই সন্ত্রাসী কাজগুলো একেবারে লাগামহীনভাবে ঘটছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে দলের মহাসচিব বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনো কর্মসূচি প্রদান না করার আহ্বান জানানো হয়।
বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিলে ‘উদ্ভূত পরিস্থির সকল দায়’ আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন ফখরুল।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীরা ‘মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ সৃষ্টির কথা বললেও বাস্তবে ‘সন্ত্রাসী পরিবেশ’ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চাইছে। তাদের মূল লক্ষ্যটাই হচ্ছে যে উসকানি দেওয়া, বিরোধী দলকে উসকানি দিয়ে একটা ট্র্যাপের মধ্যে ফেলা এবং যাতে করে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বিএনপি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে তার জন্য অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রদান করে আসছে।
চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের প্রতিটি নেতার বাড়ি বাড়ি হামলা হচ্ছে, পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে। বাড়ি ভাঙচুর করছে। বোঝা যাচ্ছে সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগণের আন্দোলনকে দমন করবার জন্য নীল নকশা করেছে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারিতে সরকার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগে ‘নজরদারি প্রযুক্তি কিনছে’ বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।
দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সারাদেশে গ্রেপ্তার চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছেই।
সোমবার চট্টগ্রাম যুব দলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিসহ চার নেতাকে কুমিল্লা হাইওয়ে থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে বিএনপির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা করছেন, তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন সরকারের কার্যক্রমের জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যাচার করছে বলেও তার অভিযোগ।
ফখরুল বলেন, আমরা কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা আরোপে খুব আনন্দিত নই। আমরা বারবার বলেছি- এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য লজ্জাজনক, বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক যে একটা প্রতিষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল কি দিল না, দিস ইজ নট অ্যা ম্যাটার। নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে জনগণ এবং সামনে জনগণ সেই নিষেধাজ্ঞাকে বাস্তবায়িত করবে।