পার্বত্য অঞ্চলে যারা রক্তপাত ঘটাচ্ছে সামনে তাদের ভয়ঙ্কর দিন আসছে

38

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলে যারা অযথা রক্তপাতের ঘটনা ঘটাচ্ছে, সামনে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর দিন আসছে। যারা এ অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, গুম করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে, খুব দ্রূত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব দুস্কৃতিকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। তাদেরকে বিচারের মুখোমুখী করা হবে। যারা এগুলো করাচ্ছে, তাদরেকেও বিচারের মুখোমুখী করানো হবে। যে কোনো মূলে পার্বত্য অঞ্চলে রক্তপাত বন্ধ করা হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরেই দ্রূত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন হঠাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত কেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ অঞ্চলে কীভাবে রক্তপাত বন্ধ করা যায়, তা শুনতে এসেছি। এরপর সভায় উপস্থিত তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামত ও পরামর্শ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনেকের বক্তব্য শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যা ঘটছে, তা শুনলাম। এখানে কাউকে হত্যা করালে তা থামানো যাচ্ছে না। ভয়ে মামলা করার সাহস পান না কেউ। সাক্ষীও হতে চান না শুনেছি। ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম হচ্ছে, তাও শুনলাম। পার্বত্য অঞ্চল বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে থাকবে, অশান্ত থাকেব, মানুষ অশান্তি থাকবে- আমরা তা চাই না।
এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। যে কোনো মূল্যে এ অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনব। কাউকে আর আতঙ্কে থাকতে হবে না। কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। এখানে স্কুল, কলেজ, বিশ্বদ্যিালয় করতে দেয়া হবে না- আমরা জানতে চাই, সেটা কার স্বার্থে। এই এলাকার মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে- আমরা তার পরিত্রাণ চাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সুন্দরবনের জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে, সর্বহারা পার্টির লোকেরা আত্মসমর্পণ করেছে, জঙ্গিবাদ দমন করা হয়েছে এবং মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনী, পুলিশ, সেনাবাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী। তাই আমরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।
স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী এ ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বুধবার রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসনিক, গোয়েন্দা সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিংয়েল সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী পুনর্বাসন টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জনরিাপত্তা বিভাগের সিনিয়ল সচিব মো. কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারি, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুর ইসলাম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ড. বেনজির আহমেদ, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরি চৌধুরী ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। সভায় তিন পার্বত্য জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কারবারিসহ নারী প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক বছর ধরে অশান্তি চলে আসছে। অশান্তি দূর করার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে মানুষকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তার জন্য সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে। পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যারা শান্তি চায় না, উন্নয় চায় না- সেইসব কতিপয় দুস্কৃতিকারীকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
পার্বত্য অঞ্চল থেকে যে কোনো সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চাই। সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। কিন্তু কতিপয় গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জেএসএস, ইউপিডিএফ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে কোনো ব্যাপার নয়। তবু আমরা সংযম রয়েছি। বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুর ইসলাম বলেন, আমাদের কাজ সীমান্ত নিরাপত্তা। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকার যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবে কাজ করব। র‌্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজির আহমেদ বলেন, সরকারের নির্দেশনা পেলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাটির নিচ থেকেও সন্ত্রাসীদের বের করে আনা হবে।