‘পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে দেশের পোশাক শিল্প প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’

20

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত উৎপাদনে দূষণ কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাকখাত পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনন্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল বাংলাদেশ এবং পোশাক শিল্প পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে তার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ওয়েষ্টিন হোটেলে বিজিএমইএ ও ওয়াটারএইড এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইন্ডাষ্ট্রিয়াল রেইনওয়াটার হার্ভেষ্টিং-এ সাসটেইনেবল এপ্রোচ টু ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিলো, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিল্পে পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা। আলোচনায় টেকসই সাপ্লাই চেইন এবং পরিবেশগত প্রভাবগুলো মোকাবেলায় সম্ভাব্য সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং সমাধানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি, পোশাক কারখানাগুলো কিভাবে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছে, উদাহরণসহকারে সেগুলো নিয়েও মতবিনিময় হয়। খবর বাসস এর
অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান গেষ্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওয়াটারএইড এর পরিচালক পার্থ হেফাজ শেখ সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন। অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স এসোসিয়েশন-বায়লা সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম।
গোলটেবিল বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন,‘আমাদের ইউএসজিবিসি থেকে প্রত্যয়িত ১৫৭টি গ্রীন কারখানা রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম রেটেড, ৯৬টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০০টি গ্রীন কারখানার মধ্যে ৪০টি কারখানাই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও ৫০০টি কারখানা প্রত্যয়িত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই গ্রীন কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা প্রায় ৪০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমায় এবং এসব কারখানায় প্রচলিত ভবনগুলোর তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম পানির ব্যবহার হয়।’
সবুজ কারখানাগুলো কারখানা অভ্যন্তরে শ্রমিকদের জন্য তাপমাত্রাজনিত আরামদায়ক ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে, দিনের আলোর সদ্ব্যবহার করে, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে এবং এএসএইচআরই মান অনুযায়ী কারখানা অভ্যন্তরে বায়ুর গুণগত মান বজায় রাখার ব্যবস্থা রাখে, যা শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সহায়ক। বর্ষার পানি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ এবং বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধ জল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি ক্রমশঃ হ্রাস পাওয়ার কারণে আসন্ন দিনগুলোতে যে পানি সংকটের মুখে আমরা পড়তে যাচ্ছি, তা সমাধানে আমাদের সবাইকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করতে হবে। প্রশস্ত স্থানসহকারে উন্মুক্ত ছাদ একটি টেকসই সমাধান হতে পারে এবং ব্যবসায় বিশেষ করে শিল্পে ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটানোর উত্তম উৎস হতে পারে।’
বায়লা এর সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, ‘অনেক আধুনিক শিল্প টেকসই উৎপাদন এবং পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় তাদের পদচিহ্ন রেখেছে। ভবিষ্যতের বিপর্যয় মোকাবেলায় ভ‚গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে শিল্পগুলো বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পদ্ধতি গ্রহণ করছে। তরুণরাই দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির সম্ভাবনাময় চালক। সুতরাং, তরুণদেরকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখার বিষয়ে ধারনা প্রদান করতে হবে, যাতে করে তারা আগামী দিনগুলোতে পানি সংকট মোকাবেলায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।’
সা¤প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশের পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলো রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম চালু করে সবুজ নীতি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং টেকসই পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান উদ্যোগগুলো পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে।