পদযাত্রায় শুরু নতুন আন্দোলন : ফখরুল

7

ঢাকা প্রতিনিধি

পদযাত্রার মধ্যদিয়ে বিএনপি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারকে বলে দিতে চাই, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।
অন্যদিকে বিএনপির পদযাত্রাকে ‘মরণযাত্রা’ হিসাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তারা পরাজিত হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে স্ব-স্ব কর্মসূচিতে তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য রাখেন।
গতকাল দুপুরে উত্তর বাড্ডা থেকে মালিবাগ অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরুর আগে দেওয়া বক্তব্যে করে মির্জা ফখরুল বলেন, পদযাত্রার মধ্যদিয়ে বিএনপি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকার পদত্যাগ না করলে ন্যক্কারজনকভাবে বিদায় নিতে হবে। পালাবার কোনো পথ পাবেন না।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। রাজধানীতে চার দিনের পদযাত্রার প্রথম দিন ছিল গতকাল। বিকেল ৩টায় পদযাত্রা শুরু হয়ে ৪টার দিকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রায় বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থক অংশ নেন। তারা সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বিলুপ্ত করার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার এই নীরব পদযাত্রার মধ্যদিয়ে সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করব। কারণ, এই সরকার থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাই আমরা সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব। আমাদের দাবি পরিস্কার- সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ তার ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেই প্রতিনিধিদের দিয়ে যে সরকার গঠন হবে, সেই সরকার দেশ পরিচালনা করবে।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া গৃহবন্দি আছেন, তাকে মুক্ত করার জন্য, আমাদের কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত করা জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নীরব, মহানগর বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
অন্যদিকে গতকাল দুপুরে উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শীতবস্ত্র বিতরণ ও সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এভাবেই তারা পরাজিত হবে। আগামী নির্বাচনেও তাদের মরণ হবে। রাজনৈতিক মরণ। এত লাফালাফি, এত ছোটাছুটি। এত লোটা কম্বল, এত কাঁথা-বালিশ। সমাবেশ হলে সাত দিন ধরে সমাবেশস্থলে শুয়ে পড়ে। আর পাতিলের পর পাতিল খাবার তৈরি হয়। কোথায় গেলো সেই দিন? কোথায় গেলো লালকার্ড? কোথায় গেলো গণঅভ্যুত্থান? কোথায় গেলো গণজোয়ার? গণজোয়ারে এখন ভাটার টান। তাই এটা পদযাত্রা নয়, পেছনযাত্রা। এটা পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা।
কাদের বলেন, বিএনপি তো এখন কথার রাজা। মির্জা ফখরুলের কাজ নেই, শুধু কথা। শুধু কথামালার চাতুরি। আমি কাজ করছি, আর বাধ্য হয়ে তাদের কথার জবাব দিচ্ছি। তারা একতরফা মিথ্যাচার করবে, বিষোদগার করবে। যেটা তারা করে আসছে। আমরা কী চুপচাপ বসে থাকবো? আমাদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে।
নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ শান্তি সমাবেশ থেকে বলবো, ডাক দিলে চলে আসবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়াই করছি। রাজপথে আছি, রাজপথে থাকবো। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ আমরা ছাড়বো না। আমরা মানুষের পাশে ছিলাম, এই শীতের কষ্টেও মানুষের পাশে আছি। মানুষের দুঃখে, মানুষের কষ্টে, দুর্যোগে, ঝড়ে, বন্যায় মানুষের পাশে ছিলাম।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাস। মানুষের পাশে থাকা, মানুষের পাশে আছি। নির্বাচনে জিতলেও আছি, নির্বাচনে হেরে গেলেও আছি। জেতা-হারা আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। জনগণের ইচ্ছা। জনগণ চাইলে শেখ হাসিনার কথা আমরা নির্বাচিত হবো। আর জনগণ না চাইলে ২০০১ সালের মতো আমরা বিদায় নেবো। এটাই তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আমরা জোর করে বন্দুকের নল উঠিয়ে ক্ষমতায় থাকার দল নয়।
তিনি বলেন, এই দলের শেকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। তাই আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবেন, এই দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধুকে ষাটের দশকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়, তাঁকে যখন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাচ্ছিল, কুর্মিটোলা জেল গেটে কুয়াশা ভেজা একখন্ড মাটি কপালে ঠেকালেন। কপালে ঠেকিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, এই বাংলা মা, আমি যেন জীবনে-মরণে সবসময় তোমার পাশে থাকি। আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, আমি জানি না। কিন্তু বলতে চাই, এই দেশেতে জন্ম আমার যেন এই দেশেতে মরি। এটা বঙ্গবন্ধুর কথা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলবো, এই শীতে মানুষ কষ্টে আছেন। তারা (বিএনপি) পদযাত্রা করছে, আর আমরা শীতবস্ত্র দিচ্ছি। আমরা পাল্টাপাল্টিতে নেই। তারা করছে পদযাত্রা, আমরা বস্ত্র বিতরণ। তারা বাড্ডায়, আমরা উত্তরায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুল রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান প্রমুখ।