পণ্যের উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায়ে অনিয়ম

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কতিপয় পণ্যের উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত কিছু অনিয়ম হয়েছে। আগামিতে যাতে কোনো অনিয়ম হতে না পারে এবং মনিটরিং করার জন্য একটি অ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর সুযোগ পেলেই যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে, অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলবে।
গতকাল শনিবার সকালে আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের যুদ্ধ সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নই। আমাদের যুদ্ধ যারা তিন টাকার লেবু একই মার্কেটে আট টাকায় বিক্রি করে, মিল গেট থেকে তেল ক্রয় করার পর প্রতিটি পর্যায়ে যারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের কাছে নিয়ম মেনে ব্যবসা করার প্রতিশ্রুতি দেন, কাল থেকে আমরা বাজারে অভিযানে যাব না। অন্যথায় ভোক্তাদের স্বস্তি জন্য আমাদের যা যা করার তা করব। মহাপরিচালক বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত অস্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তাসাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করতে পারে এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস হ্রাস করতে চট্টগ্রাম থেকে আইপি ইস্যু নবায়ন যাতে করতে পারে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, কোভিড অতিমারীর দুই বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বিশ্বব্যাপি বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেয়ার কারণে তৈরি পোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। আর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে পাইকারী ও খুচরা সবক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী ও প্রশাসনসহ সবাই সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। এসময় তিনি ১৩ টন ওজন বাধ্যবাধকতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর সমন্বিত প্রচেষ্টা পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে রাখার লক্ষ্যে সচেতনতা ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করার কথা জানান।
চেম্বার পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন দ্রুতগতিতে পণ্য খালাস করা, চট্টগ্রাম থেকে আইপি কোয়ারেন্টাইন ইস্যু করা এবং যথাসময়ে বিএসটিআই সনদ প্রদানের দাবি জানান।
চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ রপ্তানির বিপরীতে ডলারের দাম পাওয়া যায় প্রায় ৮৫ টাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৯০ টাকা। তিনি এ পার্থক্য দূর করা এবং এইচএস কোড ভুল হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জরিমানা প্রত্যাহারের আহবান জানান।
চেম্বার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান (টুটুল) রমজানে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে মৌসুম নয় এমন কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তিনি আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করা ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনার অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মহাসড়কে কোনো ধরণের হয়রানি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় পাঁচ লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার ফ্যামিলি কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৮টি এবং মহানগরে ছয়টি মনিটরিং টিম কাজ করছে।
সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারীশ বলেন, ব্যবসায় নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুুলিশ কাজ করছে। যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রাস্তায় কোনো পণ্যবাহী পরিবহন থামানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এসময় খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সাবেক পরিচালক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার ছাবেরী, পুলিশ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সায়েম বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), সাকিফ আহমেদ সালাম, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এস এম তাহসিন জোনায়েদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নাসিরুল আলম (ফাহিম), চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ, চেম্বারের সাবেক পরিচালক কামাল মোস্তফা, আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহেদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।