পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কার্যকরি কমিটি নিয়ে গুঞ্জন!

26

আবেদ আমিরী, পটিয়া

পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি ভেঙে নতুন কার্যকরি কমিটি প্রদানের বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গত ২০২১ সালে জেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক প্রদত্ত আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্ভাব্য কার্যকরি কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ৩ জন করে ৬ জন লবিং ও জোরালো তদবির করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে লবিংয়ের তালিকায় গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা ও দলীয় বিরোধিতাকারী আবদুল্লাহ আল নোমান সভাপতি পদ প্রত্যাশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন জানান, বিরোধিতাকারীরা কোনভাবেই দলে পদ পদবী পাবে না। পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট পাওয়া গেলে নৌকা বা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কেউ দলের পদে আসতে পারবে না।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ২০১৪ সালে দুই সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। গঠন করা হয় পাল্টা কমিটি। ২০১৪ সাল থেকে দুইটি করে কমিটি মাঠে থাকলেও কোনো কমিটি দলীয় অনুষ্ঠানে সক্রিয় ছিলো না। সংগঠনিক কর্মকাÐে গতি আনতে ব্যর্থ হয়। ওই বছর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটিতে রুবেল দাশ বাবুকে সভাপতি ও আবু তৈয়ব সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু ওই সময় শরাফত আহমদ শাহীনকে সভাপতি ও আবু সাঈদ তানভীরকে সাধারণ সম্পাদক করে আরো একটি পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়। একইভাবে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমিনুল ইসলামকে সভাপতি ও কোরবান আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি থেকে কোরবান আলী পদত্যাগ করেন। একই সাথে পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়। তাতে পদত্যাগি কোরবান আলীকে সভাপতি ও মোহাম্মদ সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৯ সালে জেলা থেকে সবগুলো কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর দুই বছর পর ২০২১ সালে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তাতে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে আহবায়ক ও ১১ জনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে পৌরসভা ছাত্রলীগের কমিটিতে অজয় শীলকে আহবায়ক ও ৫ জনকে যুগ্ম আহবায়ক করে কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। এসব কমিটি ৩ মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে ইউনিট কমিটি গঠন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা ছিলো। কিন্তু অতিমারি ও সাংগঠনিক দুর্বলতাসহ নানা কারণে বর্তমান কমিটি বেশিদূর এগোতে পারেনি। এরই মাঝে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সম্ভাব্য কমিটিতে সভাপতি পদে ৩ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে বর্তমান আহবায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকী, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিম ও আবদুল্লাহ আল নোমান এবং সাধারণ সম্পাদক পতে আরাফাত শাকিল, ইনতিসার ইবনে সেলিম ও জানে আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সভাপতি পদ প্রত্যাশি আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা ও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কুসুমপুরা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক চেয়ারম্যান ইব্রাহিম বাচ্চুকে। ওই ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুর রশিদ চৌধুরী এজাজ ও জাকারিয়া ডালিম। নির্বাচন চলাকালে বিদ্রোহী এজাজ ও ডালিমকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর তারা নির্বাচনের মাঠে থেকে যান এবং দলীয় প্রার্থী ইব্রাহিম বাচ্চুকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাকারিয়া ডালিম। নির্বাচন চলাকালে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ আল নোমান নৌকা ও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুর রশিদ চৌধুরী এজাজের পক্ষে নির্বাচনে প্রকাশ্যে কাজ করেন। ওই সময় ১৮ ডিসেম্বর কুসুমপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হোসাইন রানা, দলীয় প্রার্থী ইব্রাহিম বাচ্চু ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সচিব স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ পত্র জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর প্রেরণ করা হয়। ওই পত্রে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য রেজাউল করিম মুন্না, মহিউদ্দিন রাজিব, ফজল কাদের ও সাইদুল ইসলাম বাবুলের নামও রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, চেষ্টা করছি সমন্বয় করে কার্যকরি কমিটি গঠনের। সম্মেলন অথবা জেলা থেকে একটি কার্যকরি কমিটি দ্রæত দেয়া হবে। তবে সময়সীমা বলা যাবে না। উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও নৌকা বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পত্র তিনি হাতে পাননি। এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে শুধু নোমান নয় নৌকার বিরোধিতাকারী কেউ দলের কোন ধরনের পদ পাবে না।
অন্যদিকে জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের নতুন কার্যকরি কমিটি গঠনের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।