নৌ ঘাঁটিতে হামলা : চার নৌ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ

5

সবুর শুভ

নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির সুরক্ষিত এলাকার দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির সদস্যরা। চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মঙ্গলবার নৌবাহিনীর চার কর্মকর্তা একইদিন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের ভেতরে বাইরে সশস্ত্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনের কথা জানান এ আইনজীবী। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রটোকল এখনো পাওয়া যায়নি। আলোচিত এ মামলায় নিয়ে বাদীসহ মোট ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হল। অভিযোগপত্রে মোট সাক্ষী রয়েছেন ২৪ জন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে কারাগারে থাকা চার আসামিকে বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় ট্রাইব্যুনালে। এরপর বিচারক মো. আবদুল হালিমের সামনে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে নৌবাহিনীর চার কর্মকর্তা সাক্ষ্যদান করেন।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এডভোকেট মনোরঞ্জন দাশ জানান, আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার মামলায় মঙ্গলবার নৌবাহিনীর চার কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালতের বিচারক। এসময় আদালতের ভেতরে বাইরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ মামলায় অভিযোগপত্রের ৫ আসামির মধ্যে মো. আবদুল মান্নান, মো. রমজান আলী, মো. বাবলু রহমান ও মো. শাখাওয়াত হোসেনকে সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। অন্য আসামি আবদুল মান্নানের ভাই আবদুল গাফফার পলাতক রয়েছেন।
প্রসঙ্গত : ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর নগরীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির ভেতরে পতেঙ্গা মসজিদে জুমার নামাজের সময় আসামি আবদুল মান্নান মুসল্লিদের ওপর পরপর দুটি বোমা (গ্রেনেড) নিক্ষেপ করেন। ভীতসন্ত্রস্ত মুসল্লিরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করলে হামলাকারী মান্নান ভিড়ের সঙ্গে মিশে যান। কিন্তু তাঁর বাঁ হাতের কবজিতে ইলেকট্রিক সুইচ দেখা যাওয়ায় মুসল্লিরা তাঁকে ধরে ফেলেন। তিনি তখন আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। পতেঙ্গা মসজিদে হামলার ১০ মিনিট পর সেদিন বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে ঈশা খাঁ ঘাঁটির আরেকটি মসজিদেও একই ধরনের বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ওই মসজিদে জুমার নামাজ শুরু হলে আসামি রমজান আলী জামাতের প্রায় মাঝামাঝি সময় দুটি বোমা (গ্রেনেড) নিক্ষেপ করে মুসল্লিদের মধ্যে মিশে যান। পরে তাঁকেও ধরে ফেলা হয়। হামলার নয় মাস পর নৌবাহিনীর নেভাল প্রভোস্ট মার্শাল কমান্ডার এম আবু সাঈদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরের ইপিজেড থানায় মামলা করেন। মামলাটি চার পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত করেন। ওই হামলার ২২ মাস পর নৌবাহিনীর সাবেক এক সদস্যসহ পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুটি মসজিদে বোমা হামলায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ২৪ জন মুসল্লি আহত হন। ঘটনার পরপরই ঈশা খাঁ ঘাঁটির সব গেট বন্ধ করে তল্লাশি চালানো হয়। একটি ব্যারাকের নিচতলার শৌচাগারে পরিত্যক্ত অবস্থায় অবিস্ফোরিত বোমা এবং একটি সুইসাইড ভেস্ট (আত্মঘাতী হামলার জন্য বিস্ফোরকপূর্ণ বন্ধনী) পাওয়া যায়।
অভিযোগপত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওসমান গণির দেয়া তথ্য মতে, জেএমবির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরিকল্পনায় সংগঠনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিন ওরফে নাফিসের (বোমা বিস্ফোরণে নিহত) নেতৃত্বে ঈশা খাঁ ঘাঁটিতে হামলা হয়। ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরের একটি মেসে গ্রেনেড তৈরি করতে গিয়ে নিহত হন তিনি। যে কারণে এজাহারে আসামি হিসেবে ফারদিনের নাম থাকলেও অভিযোগপত্র থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে কাপ্তাইয়ে শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটিতে মান্নান ও রমজান ক্যানটিন বয় হিসেবে কাজ নেন। রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা পাস করলেও অষ্টম শ্রেণি পাস দেখিয়ে এ কাজ নেন।