নিলামের অযোগ্য ৫০ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করেছে কাস্টমস

23

ফারুক আবদুল্লাহ
চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিলাম অযোগ্য ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় ৫০ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার প্রায় ১৯ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। অবশিষ্ট কন্টেইনার আজ বৃহস্পতিবার ধ্বংস করবে কাস্টমস। এছাড়া বেশ কিছু কন্টেইনার মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ধবংস করার কথা থাকলেও সম্ভব হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। নগরীর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় দুই দিনব্যাপী এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২৮ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন্দর ভবনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের সিন্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকের পর চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা নিলাম অযোগ্য ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সরাতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহŸায়ক করা হয় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরীকে এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনারকে সদস্য সচিব করা হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিলাম অযোগ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিপজ্জনক পণ্যবাহী কন্টেইনার সরিয়ে নিতে তৎপর হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্যবাহী কন্টেইনার ধ্বংসে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, উল্লেখিত পণ্যবাহী কন্টেইনার ছাড়াও বন্দরে নিলামের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে ৭ হাজার ৫১১ টিইইউস কন্টেইনার। এর মধ্যে ২৭২ কন্টেইনারে বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে।
এছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আরো ৩৮৫ কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এ কার্যক্রম শেষ হতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিকারকরা কাস্টমস নির্ধারিত শুল্ক-কর পরিশোধ না করে নিলামের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে চান, যা সময়সাপেক্ষ। এ কারণে পণ্যভর্তি কন্টেইনার ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। আবার বন্ড সুবিধার আড়ালে কিছু আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় মালামাল নিয়ে আসে। কাস্টমস খবর পেয়ে মালামাল কায়িক পরীক্ষা করে শুল্কসহ জরিমানা আরোপ করলে আমদানিকারক ওই মালামাল নিতে চায় না। এছাড়া এইচএস কোড জটিলতার কারণেও দীর্ঘদিন পণ্য আটকে থাকে। এসব আটকে থাকা পণ্যগুলো প্রতিমাসে নিলামে তোলার বিধান রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট কমাতে প্রতিমাসে নিলামের আয়োজন করে থাকে।
নিয়ম অনুযায়ী, বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে আমদানিকারককে নোটিশ পাঠায় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নোটিশ দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই পণ্য খালাস না করলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস। এরপর নিলামের আহবান করে দরপত্র বিক্রি করে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময় শেষে সব দরপত্র যাচাই-বাছাই করে সর্বোচ্চ দরপত্র দাতাকে পণ্য বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া নিলামে যেসব পণ্য বিক্রি হয় না দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে নিলাম অযোগ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিপজ্জনক পণ্যবাহী কন্টেইনার পড়ে আছে। বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসব কন্টেইনার সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ কন্টেইনারের মতো সাধারণ পণ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। বুধবার (আজ) ১৯টি কন্টেইনার ধ্বংসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অবশিষ্ট কন্টেইনারগুলো বৃহস্পতিবার ধ্বংস করা হবে। আর বেশকিছু কন্টেইনার মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ধ্বংস করা যাচ্ছে না। চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে আরও কন্টেইনার ধ্বংস করা হবে।