নিভৃতচারী শব্দচাষী কবি ময়ুখ চৌধুরী

20

পূর্বদেশ ডেস্ক

অন্য রকম আগুন/ফুঁ দিয়ে নেভাতে চাও? নেভাও।/ওটা কিন্তু আমিই জ্বালিয়েছি/একবার ওইদিকে, আরেকবার ওদিকে তাকিয়ে/হঠাৎ হঠাৎ করে ফুঁ দিচ্ছ, দাও।/ধরো, কেউ দেখে ফেললো এবং জিজ্ঞাসা করলো- কী হয়েছে?/তুমি বলতেও চাইবে, আবার বলতেও পারবে না;/নেভাতেও চাইবে, কিন্তু ফুঁ দেবে খুব আস্তে করে।
ময়ুখ চৌধুরী, জন্ম ১৯৫০ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রামের দক্ষিণ নালাপাড়ায়। ছেলেবেলা কাটে কর্ণফুলীর পাড়ে। সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৮-৮৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একজন কবি, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাব্য এবং গবেষণাগ্রন্থ। ১৯৮০-এর দশক থেকে সাহিত্যকর্মে নিজস্ব কাব্যস্বরের জন্য তিনি বোদ্ধামহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁকে বাংলা কবিতার তিরিশ দশকের ব্যক্তিবাদী ধারার উত্তরাধিকারী মনে করা হয়। তাঁর কাব্যচর্চায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা ও সময়কালের অভিছাপ প্রকটিত। ছাপালেখার তেইশ বছর পর তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ কালো বরফের প্রতিবেশী প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ চরণেরা হেঁটে যাচ্ছে মুন্ডূহীন প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। সম্পাদনা করেছেন ‘প্রতীতি’ ও ‘কবিতা’ শিরোনামের দুটি সাহিত্য কাগজ। তিনি চার দশক ধরে অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি লাভ করেন ‘আবদুল করিম খান স্মৃতি পুরষ্কার’। তিনি চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি তাসলিমা শিরীণকে বিয়ে করেন।
১৯৬৫ সালে ময়ুখ চৌধুরীর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিন বছর পর ১৯৬৮ সালে সম্পাদনা করেন সাহিত্য কাগজ ‘প্রতীতি’; এই কাগজের প্রচ্ছদ শিল্পীও ছিলেন তিনি নিজে। এরপর ১৯৭০ সালে ‘কবিতা’ নামে আরেকটি কবিতাপত্র প্রকাশ করেন। ১৯৭৩ সালে শিশির দত্ত সম্পাদিত ‘স্বনির্বাচিত’ কাগজে প্রথম লেখা ছাপা হয় এবং দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত হয় প্রথম প্রবন্ধ। এছাড়াও তিনি ছদ্মনামে পত্রিকায় গল্প ছেপেছেন। ময়ুখ চৌধুরী বাংলা সাহিত্য এবং কবিতা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রকাব্য এবং ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালের তত্ত্বাবধানে কবি শামসুর রাহমান বিষয়ে গবেষণা করেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল রবীন্দ্রনাথের পোয়েটিক ওরিয়েন্টেশন। ময়ুখ চৌধুরীর এযাবৎ দশটি কাব্যগ্রন্থ, একটি কাব্যসংকলন, একটি উপন্যাস, একটি গবেষণা সহ প্রায় পনেরোর অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।