নান্দাইলের পল্টন হত্যায় ১০ জনের ফাঁসির রায়

32

ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক যুগ আগে ওষুধের দোকানি মাজহারুল ইসলাম পল্টন হত্যার ঘটনায় দশ আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিদের সাতজনকে বেকসুর খালাস দেন তিনি।
মৃত্যুদন্ডের দশ আসামির মধ্যে একলাছ উদ্দিন ওরফে জুয়েল, আবুল কাশেম ওরফে বাচ্চু মেম্বার, কবির মিয়া, আবুল কাশেম ওরফে আবু, আবুল কালাম আজাদ ওরফে পিনু ডাক্তার, চন্দন, শুক্কুর আলী ওরফে আশ্রাফ আলী ও বাদল মিয়া রায়ের সময় আদালতে হাজির ছিলেন। আর ফারুক মিয়া, রুমা আক্তার পলাতক।
খালাস পাওয়া সাত আসামির মধ্যে আফতাব উদ্দিন ওরফে আক্রাম আলী, বদরুল আলম ওরফে বদরুল, ইসমাইল হোসেন, কাজল মিয়া, আবু সিদ্দিক ও দুলাল রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত থাকলেও রফিক মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি রাত থেকে ১ মার্চ সকালের মধ্যে কোনো এক সময় পল্টনকে তার ওষুধের দোকানের ভেতরে মাথা ও কপালে আঘাত করে হত্যা করা হয়। দোকানের ভিতরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে গামছা দিয়ে মরদেহ বেঁধে রেখে দোকানে তালা দিয়ে চলে যায় খুনিরা।পল্টনের বোন বিউটি আক্তার ১ মার্চ নান্দাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল থানার ওসি জসিম উদ্দিন।
এ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা জানান, আসামিদের মধ্যে রুমা আক্তার ও ফারুক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। পরে জামিন নিয়ে তারা পালিয়ে যান। জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রুমা আক্তার একজন যৌনকর্মী। সেই রাতে পল্টনের ওষুধের দোকানে আসামিদের কয়েকজন রুমার সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। পরে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করলে রুমা ফার্মেসি মালিক পল্টনকে সেই টাকার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু পল্টন তাতে রাজি না হলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আসামিরা পল্টনকে পিটিয়ে হত্যা করে’। খবর বিডিনিউজের
অভিযোগপত্রের ১৮ আসামির মধ্যে জব্বর মোহরী নামের এক আসামি মারা গেলে তার নাম বাদ দিয়ে ১৭ আসামির বিচার শুরু করে আদালত। অভিযোগপত্রের ৩৫ সাক্ষীর মধ্যে ৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দ্রুত বিচার ট্র্যাইব্যুনালের বিচারক গতকাল মঙ্গলবার দশ আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করলেন।
রায়ে বলা হয়, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য এবং আসামি ফারুক ও রুমার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডে দশ আসামির সম্পৃক্ততা ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়েছে।
রায় ঘোষণার আগে থেকেই মামলায় অভিযুক্ত ১৭ আসামির স্বজনরা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন। রায় ঘোষণার সময় এজলাস থেকে স্বজনদের বের করে দেওয়া হয়। তাই বাইরে চলে রায়ের অপেক্ষা। রায় ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে আসামিদের বের করে আনতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এজলাস থেকে বের করার সময় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কয়েকজনকে কাঁদতে দেখা যায়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের তৃতীয় তলা থেকে নিচে নামিয়ে দন্ডিত আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজনদের কেউ কেউ আদালত প্রাঙ্গণে গড়াগড়ি করে কাঁদতে থাকেন, কেউবা মুর্ছা যান।
মামলার বাদী বিউটি আক্তার এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকার এক নম্বর দ্রæতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ কৌঁসুলি আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আসামিদের বেশিরভাগের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। খালাস পাওয়া আসামিদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না সে বিষয়ে বাদীপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে’।
অন্যদিকে দন্ডিত আসামিদের অন্যতম আইনজীবী মো. মুহিব্বুর রহমান মাহবুব বলেন, ‘মামলায় বলা হয়েছে যৌনকর্মের পারিশ্রমিক নিয়ে দ্বন্দ্বে হত্যাকান্ড ঘটে। অথচ দন্ডপ্রাপ্ত তিনজন আবুল কাশেম ফকির ওরফে বাচ্চু মেম্বার (তৎকালীন বয়স ৪০), আবুল কালাম ওরফে পিনু ডাক্তার (তৎকালীন বয়স ৩৫) ও চন্দন (তৎকালীন বয়স ২৮) সহোদর ভাই। তিন ভাই একসঙ্গে একজন নারীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব’।