নগরীর ফুটপাত ও সড়কগুলো চলাচলে নির্বিঘ্ন করা হোক

14

চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ ফুটপাত ও সড়ক দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ হকার ও রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পো এবং প্রাইভেট কার-মাইক্রোর দখলে। হাঁটার জায়গা নেই ফুটপাথে। সড়কে হাঁটতে গেলেও অবৈধ পার্কিং এর বিড়ম্বনা। এ যেন হাঁটা ও চলাচল অযোগ্য এক নগরী। সকাল কিংবা বিকালে স্কুল-কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার শেষ থাকেনা। ফুটপাত হকারের দখলে, সড়কের অর্ধেকজুড়ে পার্কিং করে থাকে রিকশা, অটো রিকশা, টেম্পোসহ প্রাইভেট গাড়ি। নগরীর বিপনী কেন্দ্র এলাকা, স্টেশন রোড, আমতল তিনপুলের মাথা, জুবলি রোড, রাইফেল ক্লাব হয়ে জহুর হকারের মুখ পর্যন্ত একদিকে যেমন ফুটপাত থেকে শুরু করে সড়কের অর্ধেকজুড়ে হকারদের দখলে অপরদিকে হাটহাজারী-ফতেয়াবাদ ও ইউনিভার্সিটি মুখী ৩নং রোডের বাস, বহদ্দারহাট মুখী ১নং রোডের টেম্পোগুলোর নেই কোন নিয়ম কানুন। যত্রতত্র গাড়ি ও টেম্পো পার্কিং এর ফলে সাধারণ যাত্রী, নগরবাসী, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ অতিক্রম করে গন্তব্যে যেতে হয়। আমতল এলাকায় রয়েছে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর অদূরেই রয়েছে মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, এ প্রতিষ্ঠান হকার, গাড়ি পার্কিং এর জন্য এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাহির থেকে তেমন দেখা যায় না। বিশেষ করে অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের চারদিকের ফুটপাতে অবৈধ হকার, দোকান, সড়কে অবৈধ টেম্পো পার্কিং ও ডাস্টবিন যেখানে রিয়াজউদ্দিন বাজার ও ইলেকট্রিক মার্কেটগুলোর আবর্জনাই শুধু ফেলা হয় না, বরং টেম্পো-রিকশার চালক, দোকানের কর্মচারি ও পথচারিার প্র¯্রাব-মলমূত্রও ত্যাগ করে থাকে দিনেদুপুরে। সভ্যতার এ যুগে এসে যত্রতত্র প্রস্রাব ও পায়খানার বিষয় কল্পনা করা না গেলেও এ এলাকায় তা নিত্য ঘটনা। এতে এলাকার পরিবেশই দূষিত হচ্ছে না, অপর্ণাচরণ স্কুলের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এক কথায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র বিপনী বিতান ও এর আশেপাশের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে ধরে নিতে হয়, পুরো নগরী এর বাইরে নয়। নগরবাসী এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চায়, মুক্তি চায় ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ দখল থেকে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাঁর নির্দেশে নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, জুবলীরোড এলাকায় অবৈধ হকার ও পার্কিং উচ্ছেদে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরপর দুদিন এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। চসিকের নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীসহ পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান প্রথমদিন নির্বিঘেœ চললেও দ্বিতীয় দিন কিছু সংখ্যক হকার ম্যাজিস্ট্রেট, চসিকের গাড়ি ও লোকজনের উপর হামলা করে। এতে বেশ কয়জন আহত হন। পরে চসিক কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সূত্র জানায়, এখনও পর্যন্ত হামলাকারীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে হকারদের বিরুদ্ধে চসিক মেয়রের কঠোর অবস্থান নগরবাসীকে আশাবাদী করে তুলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চসিকের সাধারণ সভায় মেয়র অবৈধ হকারদের বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, মিটার ছাড়া, অনুমোদন ছাড়া অবৈধ হকাররা কিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তা বুঝতে কষ্ট হয়। অথচ যারা নিয়মিত ও বৈধ গ্রাহক তাদের বিভিন্নভাবে বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়। জানা যায়, গত বুধবার হকার্স ঐক্য পরিষদের ব্যানারে টাইগারপাসস্থ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে মেয়র বরাবরে স্মারক লিপি দেন হকার নেতৃবৃন্দ। তারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফুটপাতে বসতে চাইলেও মেয়র তাঁর সিদ্ধান্তে অটল বলে জানা যায়। এদিকে মেয়রের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন বাজার, তামাককুন্ড লেইন, বিপনী বিতান ব্যবসায়ী সমিতিসহ এ এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃবৃন্দ সংবাদ সন্মেলন করে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ফুটপাত স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত করার দাবি জানান। এদিকে বৃহস্পতিবার স্টেশন রোড, রাইফেল ক্লাব থেকে শুরু করে জামাল খান প্রেসক্লাব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। আমরা মনে করি, মেয়র একার পক্ষে নগরীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সচেতন নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, যারা ফুটপাত দখল কিংবা সড়কে অধৈ গাড়ি পার্কিং করে, তাদের পেছনে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের ইন্ধন থাকে। কারণ এখানে স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে। সুতরাং একজন পোড়খাওয়া রাজনীতিক হিসেবে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য। তার এসব উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে নগরবাসী সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।