দেশে দাবদাহের তীব্রতা বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে

18

দেশে চৈত্র-বৈশাখে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি তাপমাত্রা হয়ে থাকে। এবছর চৈত্রের শুরু নাগাদ একটু বৃষ্টি হতে দেখা যায়। কয়েক দিন সকালে অথবা সন্ধ্যায় বৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে সে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দেখতে দেখতে বৈশাখ এলো। গ্রীষ্মের শুরুতে ঐতিহ্যগত ভাবে দেশে কাল বৈশাখীর প্রকোপ থাকে। হালকা বৃষ্টি, মাঝারি বৃষ্টি কিংবা শিলা বৃষ্টিও হয়ে থাকে মাঝেমধ্যে। ফলে গ্রীষ্মের দাবদাহ আর কালবৈশাখী ও বৃষ্টির কারণে প্রকৃতির মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। এবছর তা দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহ চলছে। গতকাল রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলতে থাকলে সমগ্র দেশে অনাবৃষ্টিজনিত কারণে তীব্র খরা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। বর্তমানে দেশের সর্বত্র স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিলেটসহ কিছু এলাকায় ৩৩ হতে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ডে আসছে। বাকী জেলাগুলোতে ৩৬ থেকে চল্লিশোর্ধ্ব দাবদাহ চলছে। চট্টগ্রামে আমরা ৩৩ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারছি না, কিন্তু দেশের বহু জেলায় ৩৬ হতে ৪০ ডিগ্রির অধিক তাপমাত্রায় জনজীবনে দুর্ভোগের শেষ নেই। এঅবস্থায় আরো ১ সপ্তাহ চলতে থাকলে দেশে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের জন্য কোন সুসংবাদ দিতে পারছেনা। মেঘ-বৃষ্টি কালবৈশাখী বিহীন বর্তমানে দেশে গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। এমন অবস্থাতে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েগেছে। অনেক এলাকায় দিনে বিদ্যুৎ থাকেইনা। রাতেও মাঝেমধ্যে আসে। একদিকে গ্রীষ্মের তপ্ত আবহাওয়া অন্যদিকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতির কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের বহু এলাকায় জনজীবন দুর্বিষহ সময় পার করছে।
বর্তমানে দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা চলছে। রমজানে দাবদাহে রোজাদারদের প্রচÐ কষ্ট হচ্ছে, এমন অবস্থায় গৃহে বিদ্যুৎ ও থাকছে না। এমতাবস্থায় দেশের মানুষ বর্তমানে অতি কষ্টে দিন পার করছে। এ সংকটময় মুহূর্ত হতে দেশের মানুষকে মুক্তি দিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। একদিকে তীব্র দাবদাহ অন্যদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং, দু’য়ে মিলে জনজীবনকে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখিন করচে। এমন অবস্থায় দেশের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেকগুলো টিউবওয়েলে পানি উঠছেনা। মানুষ তীব্র পানীয় জল সংকটে পড়ছে। অপরদিকে গরমের তীব্রতায় নানা প্রকার রোগবালাই বেড়ে গেছে। জ¦র, ডায়েরিয়া ইত্যাদি রোগীতে হাসপাতালে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান সময়ে দাবদাহের অস্বাভাবিক তীব্রতা একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে রূপ লাভ করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার সাথে সেবা প্রদান এগিয়ে আসতে হবে। এমন দাবদাহের দুর্যোগময় মুহূর্তে যে কোন ধরনের বিদ্যুৎ বিব্রাট দেশবাসীর কাম্য নয়। একে তো রমজান মাস, মুসলমানদের তারাবিহসহ অতিরিক্ত ইবাদাত বন্দেগী করার এ পবিত্র মাসে দেশে যেকোন ধরনের বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবেলায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরি। জনজীবন সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতে শুরু করে সব ধরণের উন্নতি অগ্রগতির পথে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। মাঠে কৃষকদের অবস্থা খুবই কষ্টদায়ক পর্যায়ে রয়েছে। বৈশাখের দাবদাগ এবং রোগবালাই হতে জনগণকে সুরক্ষায় জনসচেতনতা খুবই আশাব্যঞ্জক হতে পারে।
গরমের তীব্রতা হতে নিজেকে রক্ষায় জনগণ সচেতন হলে হিট স্ট্রোক হতে রক্ষা পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের এই প্রচÐ দাবদাহে সাধারণ মানুষ সম্ভাব্য বিপর্যয় হতে রক্ষা পেতে সচেতনতা অবলম্বন করলে সমূহ বিচিত্র বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।