দেশের মাটিতে ১০ উইকেটে হেরে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ

9

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

হারের শঙ্কা জেগেছিল চতুর্থ দিনই। কিন্তু পঞ্চম দিনে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের শতরানের জুটি বাংলাদেশ আলো দেখছিল। দ্বিতীয় সেশন ঠিকঠাক কাটিয়ে দিতে পারলে হয়তো ম্যাচ বাঁচানোর পথে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। আসিথা ফার্নান্দোর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে এর ধারেকাছেও যেতে পারল না স্বাগতিকরা। তাদের হতাশায় ডুবিয়ে অনায়াসে মিরপুর টেস্ট জিতে সিরিজও জিতল শ্রীলঙ্কা। আর দেশের মাটিতে ১০ উইকেটে হেরে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার এই জয়ের নায়ক আসিথা। চামিন্দা ভাসের পর মাত্র দ্বিতীয় পেসার হিসেবে টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ার দিনে তিনি বাংলাদেশকে থামিয়ে দেন ১৬৯ রানে। ২৯ রানের ছোট লক্ষ্য ৩ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলেন সফরকারীদের দুই ওপেনার।
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল কোনো এক দুঃস্বপ্নের মতোই। প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারায় মুমিনুল হকের দল। এরপর মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাসের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ১৪১ রানের লিড নেয় শ্রীলঙ্কা। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এর ফলে ২৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বিনা উইকেটে ৩ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা।
ম্যাচ বাঁচানোর আশায় চার উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে শেষদিনে ব্যাটিং শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর আগে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের করা ৩৬৫ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫০৬ রানে থেমেছে শ্রীলঙ্কা।
দিনের শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন মুশফিক। এ দিনে আসিথা ফার্নান্দো করা প্রথম দুই ওভার মেইডেন দিয়ে শুরু করেন তিনি। আসিথার করা তৃতীয় ওভারে অবশ্য তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
সতর্ক শুরু করেন লিটন দাসও। তবে দিনের ষষ্ঠ ওভারে কাসুন রাজিথার করা শেষ বলে আম্পায়ার কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত দেন লিটনকে। যদিও লিটন রিভিউ নিলে দেখা যায় উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকওয়েলা বাম দিকে ঝাঁপিয়ে যে ক্যাচটি নেন সেটি আসলে লিটনের ব্যাটেই স্পর্শ করেনি।
রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লিটন। এর এক ওভার পর অবশ্য আবারও আঘাত হানেন রাজিথা। লেংথ ডেলিভারিতে মুশফিকের স্টাম্প উড়িয়ে দেন তিনি। দিনের অষ্টম ওভারে ফেরার আগে মুশফিক করেন ৩৯ বলে ২৩ রান।
দলীয় ৫৩ রানে মুশফিক ফিরলে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব আল হাসান। সতর্ক শুরুর ইঙ্গিত দেন তিনিও। তবে বাংলাদেশ শিবিরে আতঙ্ক ছড়ানো রাজিথার সামনে জ্বলে ওঠেন সাকিব। ২৫তম ওভারে কভার অঞ্চলে দুটি ও পয়েন্টে একটি, মোট তিনটি দৃষ্টিনন্দন চার হাঁকান সাকিব।
লিটন-সাকিব জুটি দ্রæতই ৫০ পেরিয়ে যায়। পুল শটে সাকিবের তিন রানে এই জুটির ৫০ রান আসে ৫৮ বলে। সাদা বলের ক্রিকেটের মেজাজে ব্যাট চালাতে থাকেন সাকিব। তাতে খুব দ্রæতই বাংলাদেশ একশ পেরিয়ে যায়।
দিনের শুরুতে রাজিথা ও আসিথার ফাঁকে বোলিং শুরু করেন স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রমা। তাকে কিছুটা দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন-সাকিবরা। দলীয় ৩৫ ওভারে আক্রমণে আসেন আরেক স্পিনার রমেশ মেন্ডিস। সেই ওভারে বাংলাদেশ নেয় এক রান।
৩৮তম ওভারে জয়াবিক্রমার করা পঞ্চম ডেলিভারিটি কভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন লিটন। এই রানের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
অষ্টম বাংলাদেশি হিসেবে এই রেকর্ডে নাম লেখান লিটন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ৩৩ টেস্ট ও ৫৬ ইনিংস সময় নেন ২৭ বছর বয়সী এই ব্যাটার।

এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়াবিক্রমার ওপরেও নিয়ন্ত্রণ আনতে শুরু করেন লিটন-সাকিবরা। মেন্ডিসের ক্ষেত্রেও একই। সিঙ্গেলস, ডাবলস বা মাঝে মধ্যে চার হাঁকিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকেন লিটন-সাকিব।
দেখতে দেখতে লিডের দেখা পায় বাংলাদেশ। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে কভার অঞ্চলে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেন লিটন। তাতেই লিড মিলে বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই কাক্সিক্ষত হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। মেন্ডিসের ওভারের চতুর্থ বলটি লেগ সাইডে খেলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। টেস্ট ক্যরিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরিটি হাঁকিয়েছেন ১৩০ বলে।
এই ওভারের পঞ্চম বলে জুটির শততম রান তুলে নেন সাকিব। লিটন-সাকিব জুটির শতরান আসে ১৫৯ বলে।
হাফ সেঞ্চুরির পর বেশীক্ষণ উইকেটে থাকেননি লিটন। প্রথম ইনিংসের এই সেঞ্চুরিয়ান ফিরে যান ১৩৫ বলে ৫২ রান করে। সাকিব-লিটনের ১০৩ রানের জুটি ভাঙেন আসিথা। দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে আসিথার লেংথ ডেলিভারিটি বুঝতে পারেননি লিটন।
বলটি লিটনের ব্যাটে লেগে চলে যায় আসিথার হাতে। ধৈর্যশীল এই ইনিংসে ছিল তিনটি চারের মার। উইকেটে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন।
আসিথার চতুর্থ শিকারে পরিণত হন সাকিব। তার করা শর্ট বলটি সাকিবের ব্যাটে লেগে উপরে উঠে যায়। এরপর উইকেটরক্ষক ডিকওয়েলার গ্লাভসে জমা পড়ে তা। ৭২ বলে সাতটি চারে ৫৮ রান করেন তিনি।
ধনঞ্জয়ার বলে কাউ কর্নার অঞ্চলে চার হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাকিব। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটা সাকিবের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম সেশনের শেষ বলেই এই হাফ সেঞ্চুরি আদায় করেন সাকিব।
দীর্ঘ দিন পর টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে ডাক মেরেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ইনিংসের ৫৫তম ওভারের প্রথম বলে দলের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফিরে গেছেন তিনি।
মোসাদ্দেকের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। পরের ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে তাইজুল ও খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন আসিথা ফার্নান্দো।
আর তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় মাত্র ১৬৯ রানে। এর ফলে ঢাকা টেস্টে জয়ের জন্য লঙ্কানদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯ রানের। আর সেটা তুলে নিতে লংকানরা খরচ করেন মাত্র ১৮ বল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩৬৫/১০ (১১৬.২ ওভার) (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১; রাজিথা ৫/৬৪, আসিথা ৪/৯৩)
শ্রীলঙ্কা (প্রথম ইনিংস)- ৫০৬/১০ (১৬২ ওভার) (করুনারত্নে ৮০, ওশাদা ৫৭, ধনাঞ্জয়া ৫৮, চান্দিমাল ১২৪, ম্যাথুস ১৪৫*; সাকিব ৫/৯৬, এবাদত ৪/১৪৮)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৬৯/১০ (৫৫.৩ ওভার) ( সাকিব ৫৮, লিটন ৫২; আসিথা ৬/৫১)
শ্রীলঙ্কা (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৯/০ ( ৩ অভার) (ওশাদো ২১*)ম্যান অব দা ম্যাচ: আসিথা ফার্নান্দো
ম্যান অব দা সিরিজ: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস