সাতকানিয়ায় সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা গ্রেপ্তার

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ত্রাসী বগা সাতকানিয়া থানার দক্ষিণ চরতী গ্রামের আলী চাঁন বাড়ির মৃত আহমেদ হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শিশুহত্যা, অপহরণ, ইয়াবা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় সাবেক এমপি’র স্ত্রী-শ্যালকের ওপর হামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, ইয়াবা মামলার সাজা পরোয়ানা মূলে মো. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ বগাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গতকাল শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সাইফুল বাহিনীর তান্ডবে অতিষ্ঠ চরতীর মানুষ :
গেল জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে বগা। গত তিনমাসে চরতী-আমিলাইশ এলাকায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এই বাহিনী।
পুলিশ জানিয়েছে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খুলেনি। নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ চরতীতে নৌকার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় সাইফুল বাহিনী। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মেসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।
নির্বাচনের পরের দিন খতিরহাট এলাকায় নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিনকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন। এছাড়া ৫ ফেব্রুয়ারি চরতী ইউনিয়ন পরিষদ কার্য়ালয়ে ঢুকে বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে মারধর করে। এরপর দক্ষিণ চরতী এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পর থেকে এখনো ঘরছাড়া নুর মোহাম্মদের পরিবার। এছাড়া চরতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুদ্দিনকে অপহরণ করে মারধর ও দক্ষিণ চরতীর আরাফাত সিকদারকে মারধর করে।
নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতী কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথসভায় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুল ও তার বাহিনী। এই সময় নৌকা সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন। এর দুইদিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওইদিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মেসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি-দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুর হোসেনকেও মারধর করে সাইফুল।
দক্ষিণ চরতী ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আমিন বলেন, আমি ও আমার পরিবার যুগের পর যুগ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। একই দল থেকে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আমি ঈগলের পক্ষে নির্বাচন কার্য়াক্রমে অংশ নিলেও আমার ছোট ভাই ইলিয়াছ মেম্বার নৌকার হয়ে কাজ করেন। কিন্তু দফায় দফায় তার উপর হামলা ও দোকান ভাঙচুর এলাকার সম্প্রীতি নষ্ট করছে।
সন্ত্রাসী সাইফুলের কোনো পদ পদবি না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এতদিন পর্যন্ত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিল। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সাথে দূরত্ব তৈরি হলে তখন থেকে এম এ মোতালেবের আশ্রয় নেয় সাইফুল মেম্বার। মোতালেব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তারপর থেকে আরো হিংস্র হয়ে উঠে সাইফুল। এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতীর ১০ পরিবার। সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে দেলোয়ার হোসেন বগা। ইতোমধ্যে দুই-তিন বার জেলেও গিয়েছেন এই ইয়াবা ব্যবসায়ী।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, এই বাহিনীর অন্যদেরও ধরার চেষ্টা চলছে।