দুদক এখন অনেক ক্ষমতাশালী

0
দুদক এখন অনেক ক্ষমতাশালী

 

দুর্নীতি দমন কমিশনকে এক সময় ‘নখদন্তহীন বাঘ’ বলা হলেও সেসব দিন এখন অতীত হয়েছে দাবি করে এ সংস্থার বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদক এখন ‘অনেক ক্ষমতাশালী’।
পাঁচ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তার এ মন্তব্য আসে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, “দুদকের নখ-দাঁত নেই- সেটি অনেক পুরাতন ও প্রাচীন কথা। এটি এখন আর নেই। দুদক যথেষ্ট ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে দুদকের। আইনি ম্যান্ডেট রয়েছে এবং আমি মনে করি যতটুকু আইন আছে, এই আইন দিয়ে অনেক কিছু করা যায়।”
এরপরও এই কমিশনের পক্ষ অনেক কাজ করা ‘সম্ভব হয়নি’ জানিয়ে তিনি বলেন, “কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করবেন যে আমরা চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টার যদি কোনো ত্রæটি থাকে, সেই ত্রূটি আমার।”
ইকবাল মাহমুদ বলেন, সব দুর্নীতি দুদকের আওতায় পড়ে না। তারপরও যে কোনো দুর্নীতির কথা এলেই দুদকের কথা এসেছে। তাতে তাদের ‘বিব্রত’ হতে হয়েছে। আসলে সকল দুর্নীতি কমিশনের আওতায় নয়। এটি আমরা হয়ত বোঝাতে পারিনি। এক কমিশনের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। পরবর্তী কমিশন এটাকে আরও বেগবান করবে। খবর বিডিনিউজের
২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ইকবাল মাহমুদ। তার সময়েই দুদকের ভুলে পাটকল শ্রমিক জাহালমের জেল খাটার ঘটনা বড় ধরনের সমালোচনার জন্ম দেয়। এছাড়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ‘ঘুষ নেওয়ার’ ঘটনাও ছিল একটি আলোচিত ঘটনা।
গত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে কেউ কোনো তদবির করেনি বা সরকার থেকে কোনো ‘চাপ প্রয়োগ করা হয়নি; বলে বিদায় বেলায় দাবি করেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, “কোনো মন্ত্রী বা এমপি কখনও চাপ প্রয়োগ করেননি। শুধু একদিন একজন মন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন তিনি আমার বন্ধু হন। তিনি এসেছিলেন এক কাপ চা খেতে, কোনো তদবির করতে আসেননি। আর কোনো মন্ত্রী মহোদয় আমার কাছে আসেননি। কোনো মন্ত্রী মহোদয় আমার কাছে ফোন দিয়ে এমন কিছু বলেননি। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না। সরকারের পক্ষ থেকে আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না।”
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আগের কমিশনের সময় করা ৫৬টি মামলা তদন্ত কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “এটি একটি পুরনো প্রশ্ন। এই প্রশ্ন আপনারা সব সময় করে থাকেন, এর উত্তরও আমি দিয়েছি। আমার মনে হয় একই উত্তর হবে। এটি চর্বিতচর্বণ। বেসিক ব্যাংক ইস্যুতে ৬৫টি মামলা হয়েছে, আমার জানামতে আরও মামলা হবে।
ক্ষমতা থাকলেও দুদক একেবারে ‘স্বাধীন নয়’ এবং আদালতের কাছে সব কিছুর জবাবদিহি করতে হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রত্যকটি রিপোর্ট সেখানে বিচার-বিশ্লেষণ করে। আমাদের কাজ হল আদালতে প্রমাণ করা। আদালতে যদি প্রমাণই করতে না পারি, সেই রিপোর্টের দায়িত্ব কতটুকু, আমি জানি না।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে জনগণের যে আকাক্সক্ষা রয়েছে, তা সেবাবে পূরণ হয়নি বলে স্বীকার করেছেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, “জন আকাক্সক্ষা যে রকম, সেই মাত্রা অনুযায়ী আমরা পারিনি। কিন্তু জন আকাক্সক্ষার মত আপনি তখনই পারতেন, যখন আপনি-আমি, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সবাই একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে একটি কথা উচ্চারণ করতেন একাত্তর সালের মত যে, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা একতাবদ্ধ’।
গণমাধ্যম কর্মীদের কমিশনের গঠনমূলক সমালোচনা করতে আহব্বান জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “এই সমালোচনা আমি চলে যাওয়ার পরেও করবেন, কোনো অসুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনাদের যা করার করবেন। তারপর ব্যক্তিগতভাবে যদি কিছু করে থাকি, সেটারও সমালোচনা করবেন। এটা আমরা নিতে রাজি আছি।”
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার জন্য নতুন আইনের দরকার জানিয়ে বিদায়ী চেয়ারম্যান বলেন, “আইনি কাঠামো না হলে তা কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এই পরিমাণ সম্পদ পাওয়া গেলে কী করা হবে? এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি। ইন্ডিয়াতেও তা করতে পারেনি সেভাবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা না করে একা কিছু করতে পারবে না।”