দুই অজুহাতে খুচরায় বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম

22

মনিরুল ইসলাম মুন্না

ভোগ্যপণ্যের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে খুচরা বিক্রেতারা। বৈরি আবহাওয়া ও দেশব্যাপী লকডাউন চলার অজুহাতে এ দাম বৃদ্ধি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ তেল আর চিনির দাম পাইকারিতে বাড়লেও অন্যান্য পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার সকালে রেয়াজুদ্দিন বাজারসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দরদামের তফাৎ লক্ষ্য করা গেছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের সোবহান স্টোরের স্বত্বাধিকারি মো. সেলিম বলেন, লকডাউন আর মুষুলধারে বৃষ্টি চলমান থাকায় গুদামের অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় আমরা নতুন পণ্য তুলতেও পারছি না। কারণ লেবার এবং দোকানের কর্মচারী সংকট রয়েছে। তাই হয়তো দোকানিরা পণ্যভেদে ৪-৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আমরা দাম বাড়ার পর যে চালান এনেছিলাম, তা এখনো শেষ হয়নি। নতুন চালান দোকানে আনলে দাম কমিয়ে বিক্রি করা হবে।
খুচরা বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় ছোলার দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৮ টাকা দরে। এর মধ্যে মিয়ানমারের ছোলা ৬৫ টাকা, মাঝারি মানের ছোলা ৬০ টাকা ও নি¤œমানের ছোলা ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের দাম কেজিপ্রতি ৭৫ টাকা এবং দেশীয় মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুগডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা, আদা কেজিতে ১১০ টাকা, দারচিনি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা, জিরা ৪০০ টাকা এবং এলাচি ২০০ টাকা বেড়ে কেজিতে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া চিনি ২ টাকা কেজিতে বেড়ে ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল খোলা ১৩২ টাকা এবং বোতলজাত ১৪০ টাকা, ময়দা খোলা ৩৪ টাকা এবং প্যাকেট ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
তেল-চিনির বিষয়ে খাতুনগঞ্জের পিএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারি এমদাদুল হক রায়হান বলেন, ঈদপরবর্তী ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন, সুপার পাম ও পাম তেলের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মত বেড়েছে। একই সাথে চিনির দামও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে মণপ্রতি। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেইট বেশি থাকায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সামনের সপ্তাহে বুকিং কমলেই দাম আরও কমে আসবে।
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে চলতি মূলধন সংকটে পড়েছি। এবারের বকেয়া টাকা সঠিক সময়ে ফিরে আসবে না। এটা আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কারণ এখনও করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর মধ্যে লেনদেন সীমিত। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জাহাজ সংকট, কনটেইনার সংকট, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে চাহিদা না থাকা, টাকা বকেয়া থাকা- সব মিলিয়ে এ বছরও অনেক চাপের মধ্য দিয়েই যাবে। এতে সংকটে পড়বেন আমাদের মত ব্যবসায়ীরা।
এদিকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অবস্থা বেহাল জানিয়ে হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, লকডাউনের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে আসতে পারছেন না। এখানকার আড়তে মালামাল পড়ে আছে। বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। আমরা প্রতিদিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসে আছি। কিন্তু ক্রেতা নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চরম ক্রেতাসংকটে আছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু ব্যবসা নয়, ব্যাংক লেনদেনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়। কাছে ও শহরের কিছু খুচরা দোকানদাররা অল্প মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের বিক্রি কম হওয়ায় দামও বাড়িয়ে বলার সুযোগ নেই। গত বছরও আমরা বিপুল পরিমাণে লোকসান দিয়েছিলাম। এবার কি হবে সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তায় ভালো বলতে পারবেন।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বদেশকে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃতে সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় সংক্রান্ত দর নির্ধারণ কমিটি কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেন। কৃষি বিপণন অধিদফতরও কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দর নির্ধারণ কমিটি চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে সয়াবিন ও পাম তেলের দর ঠিক করেন। এর আগে ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চালের দর ও ২০ অক্টোবর আলুর দর নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর। তবে নির্ধারিত দরে আলু, সয়াবিন তেল, চাল কোনোটাই দেশের কোথাও ক্রেতারা বাজারে পাননি। ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সংগঠনের মাঝে ব্যবধান বাড়ায় এবং সরকারের ওপর ব্যবসায়ীদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা অপরাধে জড়ালেও শাস্তির দৃষ্টান্ত তেমন নেই। ফলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা সেজে ব্যবসায়ীদের অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।