তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা হোক

16

একদিকে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ, অপরদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষ, চারদিকে শ্রমজীবী মানুষের হাঁসফাঁস বেড়ে চলছে। এ অবস্থায় মানুষ একটু বৈদ্যুতিক ফ্যানের নিচে বসে ঠাÐা বাতাস নিবে-সেই সুযোগও দিচ্ছেনা বিদ্যুৎ। তীব্র গরমের সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিংও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরমধ্যে হাটহাজারী পাওয়ার গ্রিডে বিস্ফোরণ ও আগুন বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ অস্থায় বিদ্যুতের স্বাভাবিক সঞ্চালন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা একান্তই জরুরি। এছাড়া হাটহাজারী পাওযার গ্রিডে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করাও জরুরি। কারণ প্রায় প্রতি বছর এ স্টেশনে কোন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চট্টগ্রাম নগরীসহ পুরো জেলা, কক্সবাজার এবং দুই পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ সংকট দেখা দেয়। সুতরাং হাটহাজারী পাওয়ার গ্রিডে মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন বিস্ফোরণ ঘটে তা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এখন চলছে পবিত্র রমজানের শেষ দশক। এর ওপর ঈদের বাজার। মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের না হয়ে পারছেনা। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ যারা দিনে এনে দিনে খান-তাদের অবস্থা একেবারেই নাজুক। জানা যায়, তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও কাশি বেড়ে গেছে। উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের জন্য দিনগুলো ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে শিশুরা নিউমেনিয়াসহ গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সুতরাং এ অবস্থায় সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। শিশুদের নিয়ে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া একেবারেই উচিৎ নয়। সম্প্রতি দুই মাসের এক শিশু সন্তানকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটার জন্য মার্কেটে গেলে মায়ের কোলেই শিশু হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়ার খবর সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। এঘটনার সত্যমিথ্যা যাই হোক, আমাদের অবচেতন অনেক মায়ের ঈদ মার্কেট ঘুরোঘুরি অনেক বড় ঘটনার জন্ম দেয়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক দম্পতির চার বছরের শিশু হারিয়ে যাওয়ার খবরও আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। এধরনের ঘটনা দুঃজনক ও অনাকাক্সিক্ষত। তবে একটু সচেতন হলে আমাদের সন্তান ও আমরা নিজেরাই সুরক্ষা পেতে পারি। এরজন্য সরকারের উদ্যোগ প্রয়োজন হয় না। সরকার জনগণকে সহায়তা করবে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। আমরা জানি, দেশে এখন আগের মত বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। সরকারের তথ্য অনুযায়ী দেশে চাহিদা অনুপাতে একশ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ পাওয়ার সেল কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহের যে তথ্য আপলোড করেছে, তাতে দেখা যায়, দেশের কোটি ৪৮ লাখ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৯৩২ মেগাওয়াট। এ হিসেবে যে অবস্থায় হোকে দেশে লোডশেডিং থাকার কথা নয়। এরপরও তীব্র গরমে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশের মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা, বিষয়টি রহস্যজনক বলে আমাদের মনে হয়। ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে-এ খবরটি নিশ্চয় সরকারের কর্ণগোচরে আছে। আমরা অনেক আগে থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে ‘সরষের ভিতর ভুতের’ কথা শুনে আসছি। এ বিভাগের অনিয়ম এবং অননুমোদিত বিদ্যুতের সংযোগের ফলে বৈধ গ্রাহকদের সীমাহীন কষ্ট পেতে হচ্ছে-একথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। যেমনটি দেশে বেটারিচালিত যেসব রিক্সা দাপটে চলছে, এসব হাজার হাজার রিকশার যে বৈদ্যুতিক চার্জ দেযা হয়, এগুলো কারা দেন, কোন বৈধ লাইন থেকে দেন-এটির কোন সঠিক জবাব নেই। অর্থাৎ জবাবদিহিতার বাইরে থাকা এসব রিকশার চার্জ ফি কারা নিচ্ছেন তাও জানা যায়নি আজ পর্যন্ত। অবশ্যই এর খবর বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের কাছে থাকার কথা। কিন্তু তারা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন দৃম্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন এর কোন সংবাদ আমাদের জনা নেই। আমরা মনে করি, সরকার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে বিপ্লব ঘটিয়েছে-এর সুফল জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে না পারলে সরকারের সফলতা ¤øান হয়ে পড়বে। আর এর দায়ভার অবশ্যই বিদ্যুৎ বিভাগকে নিতে হবে। প্রচÐ তাপদাহে জনগণের কষ্ট লাঘবে বিদ্যুৎ বিভাগ উৎপাদিত বিদ্যুতের সঠিক সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করবে-এমটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।